
ছবিঃ জনকণ্ঠ
এবার ভবঘুরেদের পাশে দাঁড়িয়ে নিজ হাতে তাদের মাথার চুল ও সেভ করিয়ে, হাত-পায়ের নখ কেটে দিয়ে গোসল করানোর পর নতুন পোশাক পরিয়ে উন্নতমানের খাবার খাইয়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হওয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ল্যান্স করপোরাল (গানার) কাজী সুজন।
কাজী সুজন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার টরকীর কাঁঠালতলী গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্টিলারি কোরে কর্মরত রয়েছেন। ঈদ-উল আযহার ছুটিতে তিনি গ্রামের বাড়িতে এসেছেন।
সেই ভাইরাল কাজী সুজন এবার কোরবানির ঈদের ছুটিতে বাড়িতে বেড়াতে এসেও বসে নেই। তার প্রতিষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক কর্মীদের নিয়ে তিনি ঈদের আগেরদিন (৬ জুন) থেকে শুরু করে আজ (৮ জুন) পর্যন্ত গৌরনদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ভবঘুরে (মানসিক প্রতিবন্ধী) পুরুষদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন।
তাদের সাথে কথা বলে কাজী সুজন নিজ হাতে মেশিনের সাহায্যে চুল কেটে ও সেভ করিয়ে, হাত-পায়ের নখ কেটে দিয়েছেন। পাশাপাশি ওইসব ভবঘুরেদের নিজ হাতে গোসল করিয়ে নতুন পোশাক পরিয়ে উন্নতমানের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। এভাবে গত তিনদিনে একাধিক ভবঘুরেদের তিনি (কাজী সুজন) সেবা যত্ন করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
তার (সুজন) প্রতিষ্ঠিত একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জরুরি রক্তের প্রয়োজনে গৌরনদী ব্লাড ডোনার্স ক্লাব (জিবিডিসি), টরকী বন্দরের ট্রাস্ট ওল্ড এজ এন্ড কেয়ার হোম এবং গৌরনদী অতিথি আপ্যায়ন ক্যাটারিং সার্ভিস।
এসব সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী কর্মীদের মাধ্যমে আর্তমানবতার সেবায় এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে ইতোমধ্যে সেনা সদস্য কাজী সুজন ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
এছাড়াও তিনি (কাজী সুজন) ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার পাইন্দং ইউনিয়নের ভুজপুর এলাকায় বন্যাকবলিতদের উদ্ধার করতে গিয়ে নিজের হাঁটুকে সিঁড়ি বানিয়ে অসুস্থ ও গর্ভবতী নারীদের ট্রাকে উঠতে সহায়তা করে মানবিক সেবার অনন্য নজির স্থাপন করেছিলেন।
ওই এলাকায় অসহায় বন্যার্তদের উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে গিয়ে তিনি এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। অনেকেই ওইসময় সেনা সদস্য সুজনকে ‘সুপার হিরো’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন।
ফলশ্রুতিতে কাজী সুজনকে ধন্যবাদ জানিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
কাজী সুজনের প্রতিষ্ঠিত গৌরনদীর টরকী বন্দরের ট্রাস্ট ওল্ড এজ এন্ড কেয়ার হোমে আশ্রয় পেয়েছেন পরিচয় ও আশ্রয়হীন অসংখ্য নারী-পুরুষ। তাঁদের দেখভালের জন্য ওই হোমের স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
কাজী সুজনের গর্ভধারীনি মা নিজ থেকে ওইসব আশ্রিতদের তিনবেলা রান্না করে খাবার খাওয়াচ্ছেন। মায়ের অনুপ্রেরণায় নিজের কাজে আরোগতি বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন সেনা সদস্য কাজী সুজন।
আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে জড়িয়ে রাখা সেনা সদস্য কাজী সুজন এবং তার টিমের স্বেচ্ছাসেবকদের এসব স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ডের ভূয়শী প্রশংসা করে গৌরনদী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাজিব হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, রাস্তার পাশে পড়ে থাকা ময়লা ও দুর্গন্ধে একাকার মানসিক প্রতিবন্ধীেদের পাশে যখন কেউ ঘৃণা করে যেতে চায়না, সেইসব ব্যক্তিদের আপন মানুষ ভেবে তাদের পাশে ছুটে গিয়ে তাদের পরিস্কার-পরিচ্ছনতা থেকে শুরু করে, সু-চিকিৎসা, সেবা-যত্ন, খাবারের ব্যবস্থা এবং আশ্রয়ের ঠিকানা দিয়ে কাজী সুজন সমাজে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন গড়েছেন।
সাব্বির