
ছবি: সংগৃহীত
পাখিদের আমরা সাধারণত মমতাময় ও স্নেহশীল অভিভাবক হিসেবেই কল্পনা করি। কিন্তু প্রকৃতির অজানা ও কঠিন নিয়মে অনেক সময় তারা এমন আচরণ করে যা আমাদের দৃষ্টিতে নিষ্ঠুর মনে হতে পারে। তাদের মধ্যেই কিছু পাখি নিজের ছানাকে হত্যা করে এমনকি খেয়েও ফেলে—এমন ঘটনাও ঘটেছে।
এই আচরণকে বলা হয় ফিলিয়াল ক্যানিবালিজম। এটি আসলে একটি বিবর্তনগত কৌশল, যার মাধ্যমে মা-বাবা পাখি নিজের দুর্বল সন্তানদের হত্যা করে বা খেয়ে ফেলে যাতে অন্য স্বাস্থ্যবান ছানাগুলো বাঁচতে পারে।
এই আচরণ ঘটে মূলত খাদ্যসংকটের সময়ে। খাদ্যের পরিমাণ সীমিত হলে পাখিরা মূল্যায়ন করে কোন ছানাটি দুর্বল বা টিকে থাকার সম্ভাবনা কম। সেই ছানাটিকে সরিয়ে দিলে বা খেয়ে ফেললে বাকি ছানাগুলো খাদ্য ও যত্নে বেশি সুযোগ পায়। এতে প্রজাতির টিকে থাকার সম্ভাবনাও বাড়ে।
বিজ্ঞানীরা এটিকে ব্রুড রিডাকশন বা সন্তানের সংখ্যা হ্রাস কৌশল হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।
সাদা ও কালো ষটর্ক (white and black storks) পাখিদের মধ্যে এই ধরনের আচরণ বেশি দেখা গেছে। ইসরায়েলের গবেষক মেইর ফ্রিডম্যান ও দান আলনের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রজনন মৌসুমে এই পাখিরা নিজের দুর্বল ছানাকে মেরে ফেলে, কখনো কখনো খেয়েও ফেলে।
এই ঘটনাগুলো মানুষের দৃষ্টিতে যতটা অমানবিক মনে হোক, প্রকৃতির চোখে তা একটি যৌক্তিক ও টিকে থাকার প্রয়োজনীয়তা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পাখিদের এই সিদ্ধান্তটা আবেগ নয়, বরং একধরনের "জৈবিক হিসেব"। যখন একটি দুর্বল ছানা অন্যদের বেঁচে থাকার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তখন মা পাখি কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়—প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য।
এই আচরণ আমাদের মনে প্রশ্ন জাগালেও প্রকৃতি তার নিজের নিয়মে চলে, যেখানে টিকে থাকা মানেই শক্তির বিজয়।
মুমু ২