
ছবিঃ সংগৃহীত
বেঙ্গালুরুর ৪৫ বছর বয়সী এক নারী রাতে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, সিঁড়ি উঠলে শ্বাসকষ্ট এবং হালকা বুকব্যথাকে কাজের চাপ মনে করে উপেক্ষা করেন। এমনকি তাঁর চিকিৎসকও বিষয়টি ‘অ্যাংজাইটি’ বা মানসিক উদ্বেগ বলে মনে করেন। কিন্তু এক রাতে অতিরিক্ত ঘাম ও দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি নিয়ে যখন তিনি হাসপাতালে ছুটে যান, তখন তাঁর ইসিজি (ECG) রিপোর্টে ধরা পড়ে—তিনি হার্ট অ্যাটাক করেছেন।
এই ঘটনা মোটেও বিচ্ছিন্ন নয় বলে জানিয়েছেন বেঙ্গালুরুর স্পার্শ হাসপাতালের লিড কার্ডিওলজিস্ট ও মেডিকেল ডিরেক্টর ড. রঞ্জন শেঠি। তাঁর মতে, নারীরা অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণকে মানসিক চাপ বা উদ্বেগ ভেবে ভুল করেন, আর তাতেই ঘটে মারাত্মক বিপদ।
নারীদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ কেন আলাদা?
ড. শেঠির ব্যাখ্যায়, পুরুষদের তুলনায় নারীদের উপসর্গ তুলনামূলকভাবে কম স্পষ্ট ও ভিন্নরকম হয়। অনেক সময় তা স্ট্রেস বা হজমের সমস্যার মতো মনে হতে পারে।
সাধারণ উপসর্গগুলোর মধ্যে থাকতে পারে:
শ্বাসকষ্ট
অস্বাভাবিক ক্লান্তি
বমি বমি ভাব বা পেটে অস্বস্তি
মাথা ঘোরা বা দুর্বল লাগা
হালকা বুকব্যথা, যা গ্যাস্ট্রিক মনে হতে পারে
নারীদের ব্যথা সহ্যক্ষমতা বেশি হওয়ার কারণে তারা অনেক সময় বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে উপেক্ষা করেন বলেও জানান ড. শেঠি।
‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’ কী?
অনেক নারী মূল আর্টারির পরিবর্তে ছোট ধমনীতে ব্লকেজে আক্রান্ত হন, যেটা সাধারণ ইসিজি বা পরীক্ষায় ধরা পড়ে না। এতে চরম ব্যথার পরিবর্তে হজমে সমস্যা, পেশিতে টান বা ক্লান্তির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
মেনোপজের সময় হরমোনে ওঠানামার কারণেও ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেমে গোলযোগ দেখা দিতে পারে—যেমন অনিয়মিত হার্টবিট বা প্যালপিটেশন—যা অনেকেই হরমোনাল সমস্যা ভেবে এড়িয়ে যান।
উদ্বেগ না হার্ট অ্যাটাক—চিনবেন কীভাবে?
ড. শেঠির মতে, হার্ট অ্যাটাক সাধারণত শারীরিক পরিশ্রমের পরে (যেমন সিঁড়ি ওঠা) উপসর্গ তৈরি করে এবং তা সময়ের সাথে বাড়ে। অ্যাংজাইটি বা মানসিক চাপ যেকোনো সময় হতে পারে এবং সাধারণত নিজে নিজেই কমে যায়। যদি বুকব্যথা, উপরের পেটে চাপ বা শ্বাসকষ্ট ২০ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয় এবং অস্বাভাবিক মনে হয়, সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নিন।
দ্রুত পরীক্ষা কীভাবে করবেন?
ইমার্জেন্সি রুমে গিয়ে ECG করান
রিপোর্টে সন্দেহজনক কিছু থাকলে ‘ট্রোপোনিন টি’ (Troponin T) টেস্ট করে নিশ্চিত হওয়া যায় হার্ট মাংসপেশির ক্ষতি হয়েছে কি না। ড. শেঠির পরামর্শ, “নারীরা যেন নিজেদের শরীরের সংকেতকে গুরুত্ব দেন। যদি অস্বাভাবিক কিছু মনে হয়, দেরি না করে হাসপাতালে যান।”
নারীদের জন্য পরামর্শ:
হালকা হলেও বুকব্যথা বা অস্বস্তি উপেক্ষা করবেন না।
মানসিক চাপ মনে হলেও যদি শারীরিক উপসর্গ থাকে, গুরুত্ব দিয়ে দেখুন।
বারবার ক্লান্তি, ঘাম, হজমে সমস্যা—এসবও হতে পারে হৃদ্রোগের পূর্বাভাস।
পরিবারে হৃদ্রোগের ইতিহাস থাকলে সতর্ক থাকুন এবং নিয়মিত চেকআপ করান।
নারীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ এখনো হৃদ্রোগ। অথচ অনেকেই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বুঝতেও পারেন না যে বিপদ আসন্ন। আপনার শরীরের সঙ্গে মনোযোগ দিয়ে কথা বলুন। সময়মতো চিকিৎসা নিতে দেরি করলে হতে পারে মারাত্মক ফল।
“আপনার শরীর যদি কিছু বলতে চায়—শোনার চেষ্টা করুন। এটি হয়তো আপনার জীবন বাঁচাতে পারে,” বললেন ড. শেঠি।
সূত্রঃ financialexpress.com
নোভা