
অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে দরিদ্রতা ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে আছেন গাইবান্ধার মতিয়ার মিয়া। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে কাশের বড়ি, টেস্টি হজমি বিক্রি করে সংসার চালান।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের জুম্মাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মতিয়ার মিয়া। দুই ছেলে এবং এক মেয়ের জনক তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রত্যহ তিনি সকালে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে বের হয়ে শহরের পূর্বপাড়া থেকে পায়ে হেঁটে পুরাতন বাজার, কাচারী বাজার, পুরাতন ব্রিজ, গাইবান্ধা পৌর পার্ক, বাংলাবাজার, গাইবান্ধা রেলস্টেশন, হকার্স মার্কেট, নিউমার্কেট, ডিবি রোড হয়ে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এসব এলাকায় কাশের বড়ি বিক্রি করেন। মাঝে মাঝে গ্রামেও গিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে বিক্রি করেন কাশের বড়ি ও টেস্টি হজমি।
মতিয়ার মিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় দেখা যায়, চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। গলায় গম্ভীর ভারী আওয়াজে বলছিলেন, “কারো কাছে হাত পেতে খাবার পাই না, কষ্ট হলেও এভাবেই বড়ি বিক্রি করে চাল, ডাল, আলু নিয়ে যাই বাড়িতে। কাশের বড়ি এক টাকা করে বিক্রি করি। পাতা নিলে দশ টাকা। সারাদিনে ১০-১৫ পাতা বিক্রি করি, কোনোদিন ২০ পাতাও।”
জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে এই ব্যবসা করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। বয়স ছাড়িয়েছে ৭০। পরিবারের কথা চিন্তা করেই এখনো হাল ধরে আছেন এ ব্যবসায়। সম্প্রতি কিছু ইউটিউবার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর অর্থ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে তার ভিডিও ধারণ করে নিয়ে যান। কিন্তু পরবর্তীতে তারা আর দেখা করেননি—এই আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি।
পৌর শহরের জুম্মাপাড়ার স্থানীয় যুবক নাজমুল ইসলাম নিশিত বলেন, “এই মতিয়ার চাচাকে আমি অনেক ছোট থেকে দেখতাম কাশের বড়ি বিক্রি করতেন, এখন বড় হয়েও দেখি একই ব্যবসা করছেন। দরিদ্র পরিবার হওয়া সত্ত্বেও তিনি কখনো কারো কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাতেন না। আমাদের সমাজের জন্য তিনি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।”
সানজানা