ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিলুপ্তির পথে বাসা তৈরির নিখুঁত কারিগর বাবুই পাখি

হৃদয় হোসাইন, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, পাবনা

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ৮ জুন ২০২৫

বিলুপ্তির পথে বাসা তৈরির নিখুঁত কারিগর বাবুই পাখি

ছবি: জনকণ্ঠ

গাঁও-গ্রামে উঁচু তাল, নারিকেল, খেজুর গাছে চমৎকার সুন্দর বাসা বোনে বলে এরা তাঁতি পাখি, বাবুই, বাউই নামেও পরিচিত। পাবনার বেড়া উপজেলার বাঙ্গাবাড়িয়া, হাটুরিয়া, নলভাঙ্গা, চাকলা এলাকায় বসতবাড়ি, রাস্তার পাশে উঁচু তাল, নারিকেল, খেজুর গাছে দেখা যায় বেশ কিছু বাবুই পাখির বাসা। জেলার সুজানগর, সাঁথিয়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুরাসহ কয়েকটি উপজেলায় এ পাখির বাসা রয়েছে।

এ পাখি ও বাসা নতুন প্রজন্মের কাছে অনেকটাই অপরিচিত। আগের দিনে রাস্তার পাশে, মাঠে, বসতবাড়ির আঙ্গিনায় তালগাছে অনেক বাবুই পাখির বাসা দেখা যেত। কিন্তু আগের মতো এখন আর বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়ে না। পাখির সেই কিচিরমিচি শব্দও শোনা যায় না তেমন। বাসস্থান সংকটের কারণে এ পাখি ধীরে ধীরে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

বাবুই পাখির বাসস্থানের প্রধান দুটি গাছ হচ্ছে তালগাছ ও খেজুরগাছ। এসব গাছ নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছে। এজন্য পাখিগুলো চরম অস্তিত্বসংকটে পড়ে আজ বিলুপ্তির পথে।

গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠোপথে, পতিত উঁচু ভিটেমাটিতে, কখনও কখনও বাড়ির সীমানায় শোভাবর্ধন তাল গাছে বাবুই পাখির বাসা শোভা পেত। তা দেখে মানুষ মুগ্ধ হতো। এদের বাসার গঠন বেশ জটিল আর আকৃতি খুব সুন্দর। তালপাতা, খেজুরপাতা, ঝাউ ও লতা-পাতা দিয়ে বাবুই পাখি উঁচু তালগাছে তাদের বাসা বাঁধে। এ বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণীয় লাগে, ঠিক তেমনি অনেক মজবুত। সহজে ঝড়-বৃষ্টিতে তাদের বাসা ছিঁড়ে নিচে পড়ে না।

এ কারণে বাবুই পাখিকে শৈল্পিক ইঞ্জিনিয়ার বলা চলে। নিজের ঘর সাজাতে তাদের কোনো জুড়ি নেই। নয়নাভিরাম বাসা দেখতে উল্টানো কলসির মতো। বাসা বানানোর জন্য বাবুই খুব পরিশ্রম করে। ঠোঁট দিয়ে ঘাসের আস্তরণ ছাড়ায়। যত্ন করে পেট দিয়ে ঘষে গোল অবয়ব মসৃণ করে। শুরুতে দুটি নিম্নমুখী গর্ত থাকে। পরে একদিক বন্ধ করে ডিম রাখার জায়গাও তৈরি করা হয়। অন্য দিকটি লম্বা করে প্রবেশ ও প্রস্থান পথ থাকে। বাসা যখন উঁচু তালগাছে দোল খায়, তখন দারুণ লাগে।

বেশিরভাগ বাবুই প্রজাতির পুরুষ সদস্য উজ্জ্বল রঙের হয়। প্রজনন মৌসুমে বর্ণের ভিন্নতা প্রদর্শন করে। বাংলাদেশে তিন ধরনের বাবুই দেখা যায়—দেশি বাবুই, দাগি বাবুই ও বাংলা বাবুই।

বাবুই পাখি ও তার বাসা নিয়ে লেখা 'স্বাধীনতার সুখ' কবিতার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। স্থানীয় পাখিপ্রেমী ও সমাজ সচেতন ব্যক্তিদের মন্তব্য, বাবুই পাখি ও বাসা টিকিয়ে রাখতে সকলের উচিত বেশি করে তালগাছ ও খেজুরগাছ লাগানো। পাখি শিকার প্রতিরোধ করতে হবে।

তালগাছের স্বল্পতা আর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে বাবুই পাখি আজ নিজেই অস্তিত্বসংকটে আছে বলে মনে করেন অনেকেই। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বিলুপ্তির পথে প্রকৃতির চিরচেনা বাবুই পাখির বাসা।

মুমু ২

×