
ছবি: সংগৃহীত
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করা প্রায়শই বিভ্রান্তি, ঈর্ষা ও হীনম্মন্যতা সৃষ্টি করে। এমনটাই ঘটেছিল লিজি ভেলাসকেজের জীবনে—একজন নারীর, যিনি আজ বিশ্বব্যাপী বুলিং বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক। তবে তার যাত্রা ছিল কণ্টকাকীর্ণ।
২০০৬ সালে, মাত্র ১৭ বছর বয়সে, ইউটিউবে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে তাকে ‘বিশ্বের কুৎসিততম নারী’ বলে অপমান করা হয়। বিরল এক রোগে আক্রান্ত লিজির জন্য সেটি ছিল এক ভয়ংকর মানসিক আঘাত। জন্ম থেকেই তিনি নিওনেটাল প্রোজেরয়েড সিনড্রোমে আক্রান্ত, যা লিপোডিস্ট্রোফি ও মারফান সিনড্রোমের মিশ্রণ—ফলে তিনি কখনোই ওজন বাড়াতে পারেননি।
তবে সমাজের বঞ্চনা আর বিদ্রুপ তাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি। তার পরিবার ছিল তার শক্তি—যেখানে তিনি পেয়েছেন ভালোবাসা ও সাহস। হাইস্কুলে গিয়ে নিজের অবস্থান সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠার পর, লিজি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নতুন বন্ধু তৈরি করেন, চিয়ারলিডিং দলে যোগ দেন, এমনকি স্কুল পত্রিকায় লেখাও শুরু করেন।
কিন্তু এক ইউটিউব ভিডিও যেন তার আত্মবিশ্বাসকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। তবু সেখান থেকেই উঠে দাঁড়ান লিজি। অপমানকে শক্তিতে রূপান্তর করে তিনি বিশ্বমঞ্চে নিজের কণ্ঠ তুলে ধরেন।
২০১৩ সালে TEDxAustin Women-এ দেওয়া তার হৃদয়ছোঁয়া বক্তৃতা লাখ লাখ মানুষকে নাড়া দেয়। এরপর তিনি শিশুদের জন্য দুটি বই লেখেন, জাতীয় টক শো-তে অংশ নেন এবং তার জীবনের ওপর নির্মিত হয় প্রশংসিত তথ্যচিত্র “A Brave Heart: The Lizzie Velasquez Story”, যা ২০১৫ সালে SXSW-তে প্রদর্শিত হয়।
লিজি বলেন, “আমি মানুষকে জানাতে চাই, ভিন্নতা লজ্জার নয়—বরং সেটাই আমাদের সবার পরিচয় ও শক্তি। প্রতিটি মানুষের একটি বিশেষ জীবন উদ্দেশ্য রয়েছে।”
DoSomething.org-এর তথ্যমতে, ১২-১৭ বছর বয়সী কিশোরদের ৩৭ শতাংশই অনলাইন বুলিংয়ের শিকার হয়, যার মধ্যে অনেকেই তা একাধিকবার সহ্য করে। ভয়ংকর এই বাস্তবতার মাঝেও লিজির মত সাহসী কণ্ঠস্বররা আমাদের শেখায়—নেগেটিভিটি থেকে বেরিয়ে এসে কিভাবে নিজের স্বকীয়তা নিয়ে দাঁড়াতে হয়।
বর্তমানে ৩৫ বছর বয়সী লিজি সামাজিক মাধ্যমে ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে চলেছেন। যদিও তিনি এখনো কখনো হতাশ হয়ে পড়েন, তবুও কখনো থেমে যান না। তার জীবনের গল্প প্রমাণ করে, সুন্দরতা বাহ্যিক নয়—বরং এটি আত্মবিশ্বাস, মানসিক শক্তি এবং হৃদয়ের গভীরতায় নিহিত।
আপনি যদি কখনো নিজেকে ‘ভিন্ন’ মনে করেন, মনে রাখবেন—আপনার সেই ভিন্নতাই হয়তো কাউকে নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা দিতে পারে।
Mily