
ছবি: সংগৃহীত
ইঁদুর থেকে ছড়াতে পারে এমন ৫টি মারাত্মক রোগ
বাসার অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি কখনোই স্বস্তিকর নয়। হোক সেটা ইঁদুর, ছুঁচো, পোকামাকড়, উইপোকা বা অন্য যেকোনো কীটপতঙ্গ—অপরিচিত শব্দ বা মল-মূত্রের চিহ্ন দেখলে তা অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। এসব অনুপ্রবেশকারী শুধু ঘরের স্থায়িত্বের জন্যই হুমকি নয়, বরং তারা বহন করতে পারে এমন সব রোগ জীবাণু যা মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব রোগ প্রাণঘাতীও হতে পারে যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়।
ইঁদুরজনিত সংক্রমণের ঝুঁকি বুঝতে হলে আগে জানতে হবে রোগ ছড়ানোর পদ্ধতি ও সংক্রমণের উপায়।
রোগ ছড়ানোর সাধারণ উপায়গুলো হলো:
-
আক্রান্ত প্রাণীর মল, মূত্র, লালা বা বাসার উপাদানের সংস্পর্শে আসা (বাতাসে ভেসে বেড়ানো কণার মাধ্যমে বা সরাসরি চামড়ায় লাগলে)
-
আক্রান্ত ইঁদুর বা আক্রান্ত পতঙ্গ (যেমন: হরিণ মাছি) কামড় দিলে
-
আক্রান্ত প্রাণী বা পতঙ্গ ধরলে—এমনকি যদি কামড় বা আঁচড় না লাগে তবুও সংক্রমণ হতে পারে
-
দূষিত খাবার খেলে
নিচে ইঁদুর থেকে ছড়াতে পারে এমন ৫টি পরিচিত রোগ নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. লিম্ফোসাইটিক কোরিওমেনিনজাইটিস ভাইরাস (LCMV)
যদিও মূলত ঘরের সাধারণ ছুঁচো এই ভাইরাসের বাহক, তবে অন্যান্য ইঁদুর আক্রান্ত ছুঁচোর সংস্পর্শে এলে তারাও LCMV ছড়াতে পারে। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা সাধারণত আক্রান্ত প্রাণীর মল-মূত্র থেকে ছড়ায়।
এই রোগে সংক্রমণ দুই ধাপে হয়। প্রথম ধাপে জ্বর, বমি, মাথাব্যথা, পেশী ও জয়েন্টে ব্যথা, ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি দেখা যায়। দ্বিতীয় ধাপে মেনিনজাইটিস, এনসেফালাইটিস বা উভয়ের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
সুস্থ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা থাকলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই ভাইরাস খুব বেশি ক্ষতি করতে পারে না। তবে দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা থাকলে তা বিপজ্জনক হতে পারে।
২. হান্টাভাইরাস পালমোনারি সিনড্রোম (HPS)
এই রোগটি ইঁদুরের মল, মূত্র বা মৃতদেহের সংস্পর্শে এলে সংক্রমণ ঘটায়। হান্টাভাইরাস একটি মারাত্মক শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ এবং এর কোনও চিকিৎসা, প্রতিষেধক বা টিকা নেই।
সংক্রমণের উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, ক্লান্তি, পেছন, নিতম্ব ও উরুতে ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া ও পেট ব্যথা।
যে কোনো ধরনের ইঁদুরের মল-মূত্র দেখে থাকলে অবহেলা না করে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
৩. সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া
সালমোনেলোসিস একটি অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ যা সালমোনেলা নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়। এটি সাধারণত দূষিত খাবারের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। কিছু ইঁদুরের অন্ত্রে এই ব্যাকটেরিয়া থাকে এবং তাদের মল থেকে ছড়ায়।
উপসর্গ হিসেবে দেখা যায়: জ্বর, কাঁপুনি, পেটব্যথা, বমি, বমি বমি ভাব ও ডায়রিয়া।
৪. র্যাট বাইট ফিভার (RBF)
র্যাট বাইট ফিভার একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ যা সাধারণত ইঁদুরের কামড়ে ছড়ায়। ইঁদুরের মুখ ও নাকের অভ্যন্তরে এই ব্যাকটেরিয়া স্বাভাবিকভাবে থাকে। কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমে এটি মানুষে ছড়ায় এবং ১০% ইঁদুর কামড়েই এই রোগ হতে পারে।
মজার বিষয় হলো, অন্যান্য প্রাণী যেমন: বিড়াল, কুকুর, গারবিল বা কাঠবিড়ালিও আক্রান্ত হতে পারে এবং আবার তারা অসুস্থ না হয়েও এই রোগ ছড়াতে পারে।
৫. প্লেগ
মধ্যযুগে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া এই রোগ আজও মানুষের জন্য হুমকি। এটি মূলত বন্য বা পোষা ইঁদুরের মাধ্যমে ছড়ায়। প্লেগ রোগের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া হলো Yersinia pestis। এটি সাধারণত সংক্রমিত মাছি, টিক বা হরিণ মাছির কামড়ে ছড়ায় যারা আগে আক্রান্ত বন্য প্রাণীর রক্ত খেয়েছে।
এই রোগে বাহ্যিকভাবে হাত বা পায়ের গ্রন্থিতে ফোলা ও পুঁজ জমে যেতে দেখা যায়। প্লেগ যদিও ভয়ানক, তবে সময়মতো অ্যান্টিবায়োটিক দিলে এটি নিরাময়যোগ্য। এছাড়াও প্লেগে আক্রান্তদের গলা ও কুঁচকিতে ফোলা গ্ল্যান্ড দেখা যায়।
আবির