ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঈদের আনন্দ নয়, গাইবান্ধার গুচ্ছ গ্রামে বেঁচে থাকার লড়াই

মোঃ মাসুম পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, গাইবান্ধা

প্রকাশিত: ১৬:১৬, ৭ জুন ২০২৫

ঈদের আনন্দ নয়, গাইবান্ধার গুচ্ছ গ্রামে বেঁচে থাকার লড়াই

ঈদ এসেছে, চারপাশে খুশির আমেজ। শহরের মানুষ বাজার করছে, নতুন কাপড় পরে আনন্দে মেতে উঠছে। কিন্তু এই খুশির ঈদ যেন এসে শুধু স্পর্শ করে যায় গাইবান্ধা জেলার গুচ্ছ গ্রামের দরিদ্র মানুষের ঘরগুলো। তাদের ঘরে নেই মাংসের গন্ধ, নেই নতুন জামা, নেই ঈদের আনন্দ। শুধু আছে বেঁচে থাকার লড়াই আর চোঁখের জল লুকিয়ে রাখা এক চুপচাপ কান্না।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও সাঘাটা উপজেলার বিভিন্ন গুচ্ছ গ্রামে গিয়ে দেখা গেলো, অধিকাংশ পরিবারই দিনমজুর বা ক্ষুদ্র কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। ঈদের আগের রাতেও তাদের চোখে কোনো আনন্দ নেই, বরং চিন্তার রেখা। “ঈদের দিন কী রান্না করবো?”– এই প্রশ্নটাই যেন তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় জিজ্ঞাসা।

সাঘাটার এক গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, "আমার স্বামী রোগে পড়েছে, এখন কাজ করতে পারে না। তিন ছেলে-মেয়ের জন্য একটা নতুন জামা কিনতেও পারিনি। গরু কেনার তো সামর্থ্য নাই, এক বাড়ি দুই বাড়ি ঘুরে দু-চার টুকরো গোশত চেয়ে এনেছি। তাতেই রেঁধে বাচ্চাদের মুখে তুলে দিয়েছি।"

একই গ্রামের দিনমজুর রফিকুল ইসলাম বলেন, "ঈদের দিন সকাল থেকে পুকুর ঘাটে বসে ছিলাম যদি কেউ একটু দয়া করে গোস্ত দেয়। পরে পাশের গ্রাম থেকে এক আত্মীয় এসে বয়লা গরুর ২ কেজি মাংস ২০০ টাকা দিয়ে দিয়ে গেলো। ওইটাই ঈদের খাওয়া।"

শুধু খাদ্য নয়, ঈদের দিনে অনেক শিশুই মুখ ভার করে বসে ছিল নতুন জামা না পেয়ে। দশ বছরের তানহা চোখ নামিয়ে বলে, "আমার বান্ধবীরা সবাই নতুন জামা পরে গেছে মাঠে। আমি গেলে ওরা হাসবে, তাই যাইনি।"

গুচ্ছ গ্রামের অসংখ্য পরিবারের মধ্যে এমন অবস্থা। যারা আগে কোনো মতে চলতেন, এবার ঈদের বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আরও চেপে গেছেন জীবনের ভারে। সরকারের দেওয়া ভিজিএফ বা কোনো সহায়তা অনেকেই পাননি। স্থানীয় প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা জানান, “সংস্থান সীমিত, সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয়নি।”

এভাবেই ঈদের দিনে যখন দেশের নানা প্রান্তে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে, তখন গাইবান্ধার গুচ্ছ গ্রামগুলো ঈদের নামে বয়ে নিয়ে চলে নিঃশব্দ এক বেদনার ইতিহাস।

এইসব পরিবারের মুখে হাসি ফিরবে কবে? ঈদ তাদের ঘরে পূর্ণতা পাবে কবে? এই প্রশ্ন আজও নিঃসঙ্গ সুরে কাঁদে গাইবান্ধার গুচ্ছ গ্রামের বাতাসে।

 

রাজু

×