
ছবিঃ সংগৃহীত
প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত পৌঁছে যাচ্ছে উন্নতির শিখরে। আর এই অগ্রগতি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে করে তুলছে আরও সহজ ও কার্যকর। কিছুদিন আগেই ইলন মাস্কের স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট প্রযুক্তি ‘স্টারলিংক’ বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে। তবে সময়ের সাথে সেই প্রযুক্তিরও আসছে বিকল্প—আর সেটিই হতে চলেছে নতুন দিগন্তের সূচনা।
স্টারলিংকের প্রযুক্তি আমাদের প্রতিদিনই দিচ্ছে নতুন নতুন বিস্ময়ের অনুভব। কয়েক বছর আগেই মাস্কের এই স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট প্রযুক্তি সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু এখন এর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক একটি স্টার্টআপ—‘তারা’।
স্যাটেলাইট বা ফাইবার ছাড়াই উচ্চগতির সংযোগ!
‘তারা’ নিয়ে এসেছে এক নতুন ধরণের ইন্টারনেট প্রযুক্তি, যার জন্য প্রয়োজন নেই স্যাটেলাইট বা মাটির নিচ দিয়ে ফাইবার বসানোর। শুধু দুই প্রান্তে বসাতে হয় একটি 'লাইট ব্রিজ'। এর এক প্রান্তে থাকে লেজার প্রজেক্টর এবং অন্য প্রান্তে রিসিভার, যেখান দিয়ে লেজার সোজা ডেটা পাঠায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে।
এই প্রযুক্তির গতি স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেটের চেয়ে ১০ থেকে ১০০ গুণ পর্যন্ত বেশি। ছোট আকারের ছাদবান্ধব এই ‘লাইট ব্রিজ’ প্রতি সেকেন্ডে ২০ গিগাবিট গতিতে ডেটা পাঠাতে সক্ষম এবং তা ২০ কিলোমিটার দূরত্বেও একই গতি ধরে রাখতে পারে। শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম—সবখানেই পৌঁছে যাচ্ছে এই নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ।
প্রাকৃতিক বাধাও কোনো বাধা নয়
বৃষ্টি, কুয়াশা বা পাখির আঘাত—যেকোনো প্রাকৃতিক বাধা যাতে সংযোগে বিঘ্ন না ঘটায়, সে জন্য ‘তারা’ ব্যবহার করছে উন্নত ‘অটো-অ্যালাইনমেন্ট সিস্টেম’। এই প্রযুক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে লেজারের দিক ঠিক রেখে সংযোগকে স্থির ও নির্ভরযোগ্য রাখে।
ইতিমধ্যে বিশ্বের ১২টি দেশে সফলভাবে ব্যবহৃত হয়েছে এই প্রযুক্তি। এমনকি আফ্রিকার কঙ্গো নদীর দুই তীরের রাজধানী—ব্রাজাভিল ও কিনশাসার মাঝে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরত্বে এই লেজার লিংকের মাধ্যমে সরানো হয়েছে ৭০০ টেরাবাইট ডেটা, তাও ৯৯.৯৯% আপটাইম নিশ্চিত করে!
ফোনোটিক্স চিপ আসছে ২০২৬-এ
২০২৬ সালে ‘তারা’ বাজারে আনছে উন্নত 'ফোনোটিক্স চিপ সংস্করণ'। এই চিপ ড্রোন, স্বয়ংক্রিয় যানবাহন এবং ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT) ডিভাইসেও ব্যবহার করা যাবে। এমনকি দুর্যোগের সময় এটি ফাইবার নেটওয়ার্কের ব্যাকআপ হিসেবেও কাজ করতে পারবে।
শেষ কথা
ইন্টারনেটের এই ‘আলোর সেতু’ যেন ডিজিটাল পৃথিবীর এক নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিচ্ছে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—নতুন যুগের এই ইন্টারনেট প্রযুক্তি কি স্টারলিংকের জনপ্রিয়তাকে টপকে যেতে পারবে, নাকি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে মাস্কের স্যাটেলাইট প্রযুক্তিই টিকে থাকবে? সেই উত্তর দেবে সময়ই।
ইমরান