
ছবিঃ সংগৃহীত
নিজেদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধে নামতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র! শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও, বাস্তবতা এমনই এক বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে মার্কিন মুলুক। একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য ও খামখেয়ালি সিদ্ধান্তে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন এক দিকেই দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন, যার পরিণতি হতে পারে পারমাণবিক বিস্ফোরণের চেয়েও ভয়াবহ। মুহূর্তেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে পারে গোটা পশ্চিমা সাম্রাজ্য।
২০১৯ সালেই সমস্যার বীজ বপন করেন স্বয়ং ট্রাম্প। গ্রীনল্যান্ড কিনতে চেয়ে দেওয়া তার প্রস্তাবটি তখন ডেনমার্কসহ সারা বিশ্বই হেসে উড়িয়ে দেয়।
কিন্তু ট্রাম্প থেমে থাকেননি। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর সেই পুরোনো দাবিকে আবার সামনে আনেন আরও আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে। এবার তিনি শুধু দাবি নয়, গ্রীনল্যান্ড দখলে সামরিক শক্তি প্রয়োগেরও হুমকি দেন। এরপর থেকেই বিষয়টি পরিণত হয় এক গুরুতর আন্তর্জাতিক ইস্যুতে।
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, ডেনমার্কের স্বশাসিত অঞ্চল গ্রীনল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো একতরফা হস্তক্ষেপ বৈধ নয়। তবে ইতিহাস বলছে ভিন্ন কথা।
সাল ১৯৫১। শীতল যুদ্ধের উত্তপ্ত প্রেক্ষাপটে ডেনমার্কের সঙ্গে একটি সামরিক চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে বলা হয়, ওয়াশিংটন যেকোনো উপায়ে গ্রীনল্যান্ডের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সেই লক্ষ্যে সেখানে সামরিক ঘাঁটিও স্থাপন করা হয়।
ফলে এখন যদি ট্রাম্প গ্রীনল্যান্ড দখলের জন্য সেনাবাহিনী পাঠান, তবে শুরু হবে এক অভিনব সংঘাত—যেখানে মার্কিন সেনারাই লড়বে মার্কিন সেনার বিরুদ্ধে। কারণ গ্রীনল্যান্ডে অবস্থানরত মার্কিন বাহিনী ১৯৫১ সালের ঐতিহাসিক চুক্তির আওতায় অঞ্চলটির নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে।
এই সেনারা প্রেসিডেন্টের নির্দেশে হামলা চালাতে বাধ্য হলে যুক্তরাষ্ট্র এক অভূতপূর্ব সংকটে পড়বে—যেখানে নিজের দেশকেই রক্ষা করতে হবে নিজের দেশের হামলা থেকে!
জটিলতা এখানেই শেষ নয়। যদি গ্রীনল্যান্ডের মার্কিন ঘাঁটির সেনারা সংঘাতে জড়াতে না চান, তবে ডেনমার্ক নিশ্চুপ বসে থাকবে না। দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও নেটোর সহযোগিতা চাইতে পারে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রও নেটোর সদস্য! ফলে একই সংঘাতে রক্ষক ও হামলাকারী উভয় ভূমিকায় থাকবে আমেরিকা নিজেই।
যদি সদস্য রাষ্ট্রগুলো নেটোর আর্টিকেল ৫ অনুযায়ী ডেনমার্ককে রক্ষায় এগিয়ে আসে, তাহলে এই বিষয়টি এক পূর্ণমাত্রার আন্তঃপশ্চিমা সংঘাতে রূপ নিতে পারে।
যদিও ট্রাম্পের গ্রীনল্যান্ড কেনার দাবি আপাতত কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, তবুও এটি বিশ্ব রাজনীতির একটি ‘হট টপিক’। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে আর্কটিক অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ ও শিপিং রুট নিয়ে পরাশক্তিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দিন দিন মূল্যবান সম্পদের গুরুত্ব বাড়ছে। আর সে দিক থেকে বরফে ঢাকা গ্রীনল্যান্ড হয়ে উঠছে নতুন এক ভূ-রাজনৈতিক ‘হটস্পট’।
ইমরান