
ছবি: সংগৃহীত
টেসলা প্রধান ইলন মাস্ক ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন এখন এতটাই চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মাস্কের ১৪তম সন্তানের মা অ্যাশলি সেন্ট ক্লেয়ার খোলামেলা উপহাস করে ট্রাম্পকে ‘ব্রেকআপ অ্যাডভাইস’ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ এক পোস্টে অ্যাশলি লেখেন, ‘@realDonaldTrump, ব্রেকআপ অ্যাডভাইস দরকার হলে জানাবেন।’ এই মন্তব্যের পেছনে রয়েছে মাস্ক ও ট্রাম্পের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা, যার সূত্রপাত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে উত্থাপিত এক বিতর্কিত ‘Big Beautiful Bill’ নিয়ে।
গত ৩ জুন, মাস্ক নিজের মালিকানাধীন সোশ্যাল মিডিয়া এক্স-এ পোস্ট করে ট্রাম্পের সমর্থিত বিলটিকে ‘জঘন্য’, ‘বাজে’, ও ‘অর্থনৈতিক আত্মঘাতী’ বলে আখ্যা দেন। বিলটি সামরিক খাত ও ট্যাক্স ছাড়ের জন্য বিশাল বাজেট বরাদ্দ করছে, যার বিপরীতে স্বাস্থ্য ও জ্বালানি খাতে কাটছাঁট করা হচ্ছে। এটি আগামী ১০ বছরে মার্কিন বাজেটে ২.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের ঘাটতি তৈরি করবে বলে সতর্ক করেছে কংগ্রেশনাল বাজেট অফিস।
মাস্ক লিখেছেন, ‘এটা একেবারেই সহ্য করা যাচ্ছে না। এতো বড় বাজেট ঘাটতির বিল আসলে জনগণের ওপর বোঝা চাপিয়ে দেয়া।’
বন্ধুত্বে চিড়, দোষারোপে ব্যস্ত দুই পক্ষ
মাস্কের এ মন্তব্যে ট্রাম্প ৬ জুন ওভাল অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “ইলন বিলটি সম্পর্কে আগেই জানতেন। সমস্যা হলো, তিনি জানতে পেরেছেন যে, আমরা ইলেকট্রিক গাড়ির ভর্তুকি কাটছাঁট করবো। তখনই তার সমস্যা শুরু হলো।’
ট্রাম্প হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘ইলনের সঙ্গে আমার দারুণ সম্পর্ক ছিল। এখন আর নিশ্চিত নই।’
ব্যক্তিগত রোষানলেই কি আগুন?
এই রাজনৈতিক বিতর্কে ব্যক্তিগত আক্রমণও ঢুকে পড়েছে। প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের কিছুক্ষণ পর মাস্ক এক্সে পাল্টা লেখেন, ‘আমার সমর্থন ছাড়া ট্রাম্প নির্বাচনে হেরে যেতেন। হাউসও ডেমোক্রেটদের হাতে যেত।’
উল্লেখ্য, মাস্ক ২০২৪ সালের ট্রাম্প প্রচারণায় প্রায় ২৭৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিলেন এবং দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শকের ভূমিকা পালন করেছিলেন।
মাস্ক সরকারের ‘Department of Government Efficiency (DOGE)’ দপ্তরের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন ৩০ মে পর্যন্ত। তার দাবি ছিল, তিনি সরকারের খরচ ২ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত কমাতে পারবেন। তবে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকৃত সাশ্রয় হয়েছে আনুমানিক ১৭৫ বিলিয়ন ডলার।
পিতৃত্ব, পেমেন্ট ও প্রকাশ্যে কলহ
এর মধ্যে মাস্ক ও অ্যাশলি সেন্ট ক্লেয়ার এক সময় একে অপরকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সরাসরি দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছিলেন। মাস্ক দাবি করেছিলেন, তিনি ‘পিতৃত্ব নিশ্চিত করেননি’ এবং ‘অ্যাশলিকে ২৫ লাখ ডলার দিয়েছেন ও বছরে ৫ লাখ ডলার দেন’। পরে ল্যাবকর্পের ডিএনএ রিপোর্টে নিশ্চিত হয় যে, মাস্কই সন্তান ‘রোমুলাস’-এর বাবা (৯৯.৯৯৯৯% নিশ্চিত)।
এমন পরিস্থিতিতে অ্যাশলির এই ব্যঙ্গাত্মক ‘ব্রেকআপ অ্যাডভাইস’ সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রযুক্তি ও রাজনীতির শীর্ষ দুই তারকার এই দ্বন্দ্ব শুধু মার্কিন রাজনীতি নয়, বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে। যেখানে একদিকে ব্যক্তিগত সম্পর্ক, অন্যদিকে রয়েছে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত।
সূত্র: https://people.com/ashley-st-clair-breakup-advice-trump-musk-feud-11749205
রাকিব