ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাবা হাজার কোটির মালিক, ছেলে কেন দিনমজুর?

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৬ জুন ২০২৫

বাবা হাজার কোটির মালিক, ছেলে কেন দিনমজুর?

ছবি: সংগৃহীত

হাজার কোটি টাকার মালিক বাবা, গাড়ি বাড়ি সহ সবকিছু থাকা সত্ত্বেও তার একমাত্র ছেলে নিজেই নিজের খরচ যোগাতে কঠোর পরিশ্রম করছে। কখনো জুতার দোকানে, কখনো রেস্তোরাঁয়, আবার কখনো দিনমজুর হিসেবে কাজ করছে দ্রাভিয়া ঢোলাকিয়া। প্রশ্ন হলো, বাবার এত বিশাল সম্পদের পরেও কেন ছেলে এভাবে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য সংগ্রাম করছে? এর পেছনে রয়েছে একটি চমৎকার গল্প, যা হাজার মানুষের জীবন পাল্টে দিতে পারে।

ভারতের শীর্ষ হীরা ব্যবসায়ী সাব্জি ঢোলাকিয়া, যিনি প্রায় ১২,০০০ কোটি টাকার মালিক, তাঁর একমাত্র ছেলে দ্রাভিয়া ঢোলাকিয়া। দ্রাভিয়ার বয়স যখন ২৭ বছর, তখন সাব্জি সিদ্ধান্ত নেন, ছেলেকে টাকা-পয়সার মূল্য বুঝাতে হবে। তাই একদিন দ্রাভিয়াকে ডেকে বলে নিজের যোগ্যতায় চাকরি খুঁজে নিতে এবং নিজে উপার্জন করে কয়েক মাস চলতে বললেন। জরুরি খরচের জন্য কেবলমাত্র নাম মাত্র কিছু টাকা ছেলের হাতে তুলে দেন। সাব্জি সতর্ক করেন, চাকরিতে ঢোকার সময় তার নাম ব্যবহার করলে কল দিয়ে চাকরি না দিতে অনুরোধ করবেন।

এরপর শুরু হয় দ্রাভিয়ার সংগ্রাম জীবন। এক অফিস থেকে আরেক অফিস ঘুরে তিনি একের পর এক চাকরির প্রস্তাব থেকে বাতিল হন। শেষে উপায় না পেয়ে একটি জুতার দোকানে সেলসম্যানের কাজ নেন। কিছুদিন পর ম্যাকডোনাল্ডসে চাকরি পান, যেখানে তার মাসিক বেতন মাত্র ৪০০০ টাকা। এই নগণ্য বেতনে মাস চালানো ছিল অত্যন্ত কঠিন। বাড়তি অর্থ উপার্জনের জন্য রেস্টুরেন্ট ও একটি কল সেন্টারেও কাজ শুরু করেন দ্রাভিয়া। প্রতিদিন দুইশ টাকা বাড়ি ভাড়া ও যাতায়াত খরচ মেটাতে গিয়ে তার হাতে প্রায় কিছুই বাঁচতো না। তবু এ কঠিন অবস্থায়ও দ্রাভিয়ার মন ভেঙে যায়নি।

কয়েক মাস কাজ করার পর দ্রাভিয়া একটি কেক পাউরুটির দোকানে কাজ করতে যান, যেখানে একজন তাকে চিনে নিয়ে এই ঘটনাটি ভারতে সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে প্রচার পায় এবং সারা দেশ জুড়ে সাড়া ফেলে।

সাব্জি ঢোলাকিয়া কেন এই কঠোর সিদ্ধান্ত নেন? কারণ, তিনি এক দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান, মাত্র চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি অর্থের অভাবে। কঠোর পরিশ্রম করে ১৯৯২ সালে তার দুই ভাইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে হীরার ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে ভারতে তাদের হাজারের বেশি হীরার দোকান রয়েছে এবং ৬,৫০০ এর বেশি কর্মচারী কাজ করেন। সাব্জির নিজের জীবনে এমন কঠিন সময়ও এসেছে, যখন তিনি এক পিস পাউরুটি ও একটি মিষ্টি খেয়ে রাত্রি যাপন করেছেন। তাই তিনি ছেলেকে বাস্তবতা শেখাতে এমন কঠিন পথ বেছে নেন।

দ্রাভিয়া নিজের শিখন সম্পর্কে টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে বলেন, “আমি সম্প্রতি আহমেদাবাদ গিয়েছিলাম। হঠাৎ খুব পিপাসা পেলাম। আমি চাইলে একটি পিজ্জা শপ থেকে ৪০ টাকায় ৫০০ মিলি পানির বোতল কিনে নিতে পারতাম, কিন্তু আমি অপেক্ষা করলাম যতক্ষণ না একটি ছোট দোকান পেলাম যেখানে মাত্র ১০ টাকায় একই বোতল পাওয়া গেল। এই অভিজ্ঞতাই আমার জীবনে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন।”

১২ ঘণ্টা কাজ করে মাত্র ৩০০ টাকা উপার্জন করার পর দ্রাভিয়া বুঝেছেন, বিলিয়নিয়ার হলেও কোথায় টাকা খরচ করা উচিত তা বোঝা অত্যন্ত জরুরি।

এই গল্প থেকে শিক্ষা নেওয়া যায়—অর্থ নয়, পরিশ্রম, সততা আর মূল্যবোধই জীবনের সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। সাব্জি ও দ্রাভিয়ার এই কাহিনি অনেকে অনুপ্রাণিত হতে পারে, যারা কঠোর পরিশ্রম ও সৎ পথে চলতে চায়।

ফরিদ

×