
ছবি:সংগৃহীত
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে ভারত সরকারের আরোপিত বিধিনিষেধের প্রভাব এখন হারে হারে টের পাচ্ছে ভারতীয় জনগণ, বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সেভেন সিস্টার্স রাজ্য এবং পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারা। ঢাকাকে চাপ প্রয়োগের উদ্দেশ্যে নেওয়া এই কড়াকড়ির বলি হয়েছেন সাধারণ ব্যবসায়ী ও খেটে খাওয়া মানুষ। মঙ্গলবার একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রভাবশালী ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যার এই চিত্র তুলে ধরে।
সম্প্রতি ভারত সরকার স্থলপথে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ কয়েকটি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর ফলে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যিক অঞ্চলগুলো। নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, পেট্রোপোল, হিলি, মহাদীপুর, চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে আর রপ্তানি করা যাচ্ছে না এসব পণ্য। ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে এসব বন্দর, একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দোকানপাট, কর্মহীন হয়ে পড়ছেন হাজার হাজার শ্রমিক।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ স্থলবন্দর পেট্রোপোল এখন জনমানবহীন এলাকায় পরিণত হয়েছে। যেখানে প্রতিদিন ৬০০–৭০০ ট্রাক আসা-যাওয়া করত, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে সপ্তাহে মাত্র ২০০-র নিচে। এই বন্দর দিয়েই ভারতের স্থলভিত্তিক মোট আমদানির প্রায় ৭০ শতাংশ হয়ে থাকে। এ কারণে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে দিনমজুর, ট্রাকচালক ও পণ্য খালাসকারীদের জীবন-জীবিকা আজ চরম সঙ্কটে।
দ্য ওয়্যার-এর তথ্য অনুযায়ী, এই বাণিজ্যিক সংঘাতের জেরে অন্তত ১২ থেকে ১৫ হাজার শ্রমিক পরিবার জীবিকার মূল উৎস হারাতে বসেছে। অনেকে বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করছেন, অনেকে আবার সম্পূর্ণ কর্মহীন।
নিষেধাজ্ঞার কারণে পণ্য পরিবহনে এখন ৮-১০ দিন বেশি সময় লাগছে, খরচও বেড়েছে বহুগুণ। যার ফলশ্রুতিতে ভারতের বাজারে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি পোশাকের দাম বেড়ে গেছে অনেকগুণ। বিশেষ করে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের চাহিদা তুঙ্গে থাকলেও সরবরাহ সঙ্কটে পড়েছে বাজার। এর ফলে দাম আরও বাড়বে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবেন নিম্নআয়ের ভোক্তারা।
গত ১০ মাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে প্রায় ১০–১২ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যার বড় অংশই ছিল তৈরি পোশাক। পশ্চিমবঙ্গের বাজারে বাংলাদেশি পোশাকের সাশ্রয়ী দামের কারণে নিম্নবিত্ত মানুষের কাছে তা ছিল দারুণ জনপ্রিয়। এখন তার স্বল্পতায় তারা পড়তে যাচ্ছেন চরম বিপাকে।
আঁখি