ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কোকোপিট চারা বদলে দিচ্ছে কুড়িগ্রামের কৃষি

কীটনাশকমুক্ত নিরাপদ সবজিতে বেশি ফলন ও কর্মসংস্থান 

রাজু মোস্তাফিজ

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ৩ জুন ২০২৫

কীটনাশকমুক্ত নিরাপদ সবজিতে বেশি ফলন ও কর্মসংস্থান 

কোকোপিট পদ্ধতিতে তৈরি লাউসহ বিভিন্ন সবজির চারা কুড়িগ্রামে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে

কুড়িগ্রামে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কোকোপিটে চারা উৎপন্ন করা। নিরাপদ ও কীটনাশকমুক্ত এসব চারা এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে। জেলায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে জেলার কৃষি অর্থনীতিতে। এই কোকোপিটে উৎপাদিত চারা জেলার চাহিদা পূরণ করে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলাসহ সারাদেশে পাঠানো হচ্ছে। 
কুড়িগ্রামে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কোকোপিটে উৎপাদিত সুস্থ-সবল শতভাগ শিকড়যুক্ত সবজি, ফুল, ফল, মসলাসহ যাবতীয় চারাগাছ উৎপন্ন হচ্ছে। এ ছাড়াও বীজ, সিডলিংট্রে, কোকোপিট, ভার্মি কম্পোস্ট, মালচিংফ্লিম, নার্সারি পলিব্যাগ এবং কৃষি সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ সরাদেশে।  রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশবান্ধব এই চাষাবাদে ফলন যেমন বাড়ছে, তেমনি কৃষকদের আয়ও বাড়ছে। নারকেলের খোসা থেকে উৎপন্ন প্রাকৃতিক উপাদান কোকোপিট মাটির বিকল্প হিসেবে চারার চাষে ব্যবহৃত হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব এই পদ্ধতিতে মাটি ছাড়াই চারা তৈরি হয়। যা মাটির তুলনায় বেশি পানি ধরে রাখে এবং চারা দ্রুত বাড়তে সাহায্য করে। মাটিতে উৎপাদিত চারা জমিতে রোপণ করলে সতেজতা হারিয়ে যায়। অনেক চারা মরে যায়। সার বেশি লাগে। ফলন ও গতানুগতিক। 
কুড়িগ্রাম বেলগাছা ইউনিয়নের কৃষক সৈয়দ আলী ও রাজেন রায়ে জানান, কোকোপিটের চারা কৃষকের জন্য আশীর্বাদ। এটি দ্রুত বর্ধনশীল, ফলনও দ্বিগুণ হয়। কোকোপিট চারা ব্যবহারে শুধু ফলনই বাড়ছে না কমছে চাষাবাদের খরচও। এই চারায় কীটনাশক ও সার কম লাগে। ফলনও বেশি। মাঠ পর্যায়ে এখন অনেক কৃষক নিরাপদ সবজি উৎপাদন করছেন। দেশে প্রচলিত রাসায়নিক সার ব্যবহারে চাষাবাদে জমির ধীরে ধীরে উর্বরতা কমে যায়। কোকোপিটে উৎপন্ন চারা আগামী দিনে দেশে নিরাপদ সবজি উৎপাদনে ভূমিকা রাখবে বলে আশা কৃষকদের। 
চাকিরপাশা ইউনিয়নের কৃষক ফুলবাবু রায় জানান, কর্মসংস্থান সংকট জেলায় কোকোপিটের সংখ্যা বৃদ্ধিতে স্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ হওয়ায় খুশি কৃষকরা। এতে করে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত ও জেলার কৃষিতে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে।
নার্সারির মালিক জানান, কোকোপিটে সুস্থ-নিরাপদ চারা উপাদন করে দেশের বিভিন্ন জেলায় অনলাইন ও অফ লাইনে পাঠিয়ে আয় করছেন অনেকেই। 
কুড়িগ্রাম কৃষি প্লাটফর্মের পরিচালক এইচ এম ইদ্রিস হুসাইন জানান, নিরাপদ উপায়ে সবজি উৎপাদনে জেলায় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে বেশ কিছু কাজ করছে। কোকোপিটের চারায় ফলন বেশি হয়। আর কৃষকদের উত্তম কৃষি চর্চার অনুশীলন প্রশিক্ষণ দিচ্ছে জেলা কৃষি বিভাগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) আসাদুজ্জামান জানান, কুড়িগ্রাম জেলায় এবং উপজেলায় কোকোপিটের মাধ্য্যমে কৃষকরা সবজির চারা উৎপাদন করছেন  এবং তারা অন লাইনে ও অফলাইনে তা বিক্রি করছে। কোকোপিটের মাধ্যমে অল্প জায়গায় বেশি চারা উৎপাদন করা যায়। চারাগুলি নীরোগ এবং সবল হয়ে উঠে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ মাঠ পর্যায়ে উদ্যোত্তা, কৃষক ও নার্সারির মালিকদের দিচ্ছে এবং বাজার জাত করার সহায়তা করছে।

×