ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রপ্তানি নিয়ে বিশাল সুখবর: ট্রান্সশিপমেন্ট সংকট পেরিয়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার!

প্রকাশিত: ১২:৩৪, ২ জুন ২০২৫; আপডেট: ১২:৩৫, ২ জুন ২০২৫

রপ্তানি নিয়ে বিশাল সুখবর: ট্রান্সশিপমেন্ট সংকট পেরিয়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার!

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশের পোশাক রপ্তানি খাতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। এতদিন ঢাকার ওপর নির্ভর করে চলা এয়ার শিপমেন্টের পথ এবার সরাসরি চট্টগ্রাম থেকেই চালু হতে যাচ্ছে, যা দেশের রপ্তানি অর্থনীতিতে এক নতুন গতি আনবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রাম। এখানে রয়েছে দুটি ইপিজেড, দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ৪০০-এর বেশি গার্মেন্টস কারখানা। অথচ এতদিন পর্যন্ত এখানকার উদ্যোক্তাদের এয়ার শিপমেন্টের জন্য পণ্য ঢাকায় পাঠাতে হতো, যা সময় ও ব্যয় উভয়দিক থেকেই ক্ষতিকর ছিল।

এবার সেই চিত্র বদলে যাচ্ছে। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, কার্গো ভিলেজে দুটি আধুনিক স্ক্যানার মেশিন ইতোমধ্যে সচল করা হয়েছে। প্রস্তুত করা হয়েছে ১৭০ ও ১২০ টন ধারণক্ষমতার দুটি ওয়্যারহাউস। ওজন মেশিনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ চলছে জোরেশোরে। এর সঙ্গে সমন্বয় করে তৈরি হচ্ছে নিরাপত্তা ও কাস্টমস সিস্টেম।

বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আবদুল্লাহ আলমগীর বলেন, "আমরা আত্মনির্ভরশীল হতে চাই। ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করায় বিকল্প রপ্তানি পথ তৈরি করা এখন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই দ্রুতগতিতে সব প্রস্তুতি নিচ্ছি।"

২০০৫ সালে চট্টগ্রাম থেকে ইত্তেহাদ ও এমিরেটসের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালু হয়েছিল। তবে ২০২১ সালে তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পণ্য পাঠাতে যাত্রীবাহী বিমানের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছিল। এখন সেই ব্যবস্থাকে আরেকবার পুনর্জীবিত করা হচ্ছে, তবে এবার আরও বড় পরিসরে, আরও উন্নত অবকাঠামোতে।

এমিরেটস ও ইত্তেহাদের স্থানীয় এজেন্ট ভয়েজার এভিয়েশনের ম্যানেজার মোরশেদুল আলম বলেন, "শুধু ফ্লাইট চালু করলেই হবে না, আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে EDS (Explosive Detection System) এবং RA-3 স্ট্যান্ডার্ড নিশ্চিত করতে হবে।"

বেবিচক চেয়ারম্যান মঞ্জুর কবির ভূইয়া এ প্রসঙ্গে জানান, "আমরা খুব দ্রুত চট্টগ্রামে ইডিএস মেশিন স্থাপন করছি। RA-3 স্ট্যান্ডার্ডের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। শুরুর দিকে কিছু পণ্য অন্য পথে পাঠিয়ে ব্যবস্থা করব, এরপর পূর্ণমাত্রায় রপ্তানি শুরু হবে।"

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কার্গো কার্যক্রম চালু করতে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলো ইতোমধ্যে চিহ্নিত করেছে বেবিচক। এর মধ্যে রয়েছে—রপ্তানি এলাকায় ওজন মেশিনের অভাব, বিকল কোল্ডস্টোরেজ, স্ক্যানিং এরিয়ায় প্রবেশপথের সীমাবদ্ধতা, সীমিত কাস্টমস সেটআপ, ব্যাংক শাখা স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি।

কর্তৃপক্ষ জানায়, এসব সমস্যার দ্রুত সমাধানে কাজ চলছে। বিশেষভাবে কার্গো ওয়্যারহাউস সম্প্রসারণ, RA-3 জোন স্থাপন, এবং নতুন স্থায়ী জনবল নিয়োগের বিষয়েও কার্যক্রম এগোচ্ছে।

চট্টগ্রাম থেকে কার্গো ফ্লাইট শুরুর মাধ্যমে দেশের পূর্বাঞ্চলীয় রপ্তানিকারকদের জন্য একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর বিকল্প পথ উন্মুক্ত হচ্ছে। এতে ঢাকার ওপর চাপ কমবে এবং চট্টগ্রাম হয়ে উঠবে একটি কার্যকর এভিয়েশন হাব।

"আমরা আগামী দেড়-দুই মাসের মধ্যেই চট্টগ্রাম থেকে কার্গো ফ্লাইট চালুর চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে সিলেট থেকে কার্গো শুরু করেছি। চট্টগ্রাম শুরু হলে ইস্ট-ওয়েস্ট কানেক্টিভিটি তৈরি হবে, যা দেশের রপ্তানি ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনবে।"

শুধু চট্টগ্রাম নয়, কক্সবাজার বিমানবন্দরকেও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ও রিজিওনাল হাব হিসেবে গড়ে তোলার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। যদিও ভূমি অধিগ্রহণসহ কিছু বাধা আছে, তবুও জুনের শেষ বা জুলাইয়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো ফ্লাইট চালু হলে শুধু পোশাক শিল্প নয়—ফল, সবজি, ওষুধসহ বহু পণ্য ইউরোপ-আমেরিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দ্রুত পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। এতে চট্টগ্রাম পরিণত হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম লজিস্টিক হাবে।

দেশজুড়ে ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকদের মাঝে এ নিয়ে ব্যাপক আশাবাদ। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম হতে পারে বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতার নতুন প্রতীক—যেখান থেকে শুরু হবে আগামীর উন্নয়ন-উড়ান। 

 

 

ফারুক

×