
ছবি:সংগৃহীত
সস্তা ইউটিউব কনটেন্ট তৈরির নামে মানবিকতা ও সত্যতা বিসর্জন দিয়ে এক রিকশাচালক পরিবারকে চরম ভোগান্তির মুখে ফেলেছেন কিছু তথাকথিত ইউটিউবার। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়, পটুয়াখালী সদরের লাউকাঠি গ্রামে এক বৃদ্ধা মাকে তার ছেলে চার বছর ধরে মুরগির খোপে রেখে দিয়েছেন। ‘হৃদয়বিদারক’ শিরোনামে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি যাচাই-বাছাই না করেই অনেক মূলধারার গণমাধ্যমও প্রচার করে। কিন্তু অনুসন্ধান এবং প্রশাসনের সরেজমিন তদন্তে উঠে আসে একেবারেই ভিন্ন সত্য।
উপজেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতে তদন্তে গিয়ে দেখা যায়, ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধা লাল বরু কোনো খোপে ছিলেন না বরং ছেলের ঘরেই শুয়ে ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দারাও জানান, লাল বরুর বয়সজনিত কারণে কিছু মানসিক ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। প্রায়ই তিনি পরিবারের অজান্তে বাইরে চলে যান ও ভিক্ষাবৃত্তি করেন। ঘটনার দিন সকালে ছেলে মোস্তফা ওষুধ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনতে দোকানে যান এবং তার স্ত্রী ঘরের বাইরে গেলে লাল বরু ঘর থেকে বের হয়ে মুরগির খোপের পাশে গিয়ে বসেন। সেই সময় একদল ইউটিউবার তাকে খোপে ঢুকতে বলেন এবং মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে তা মনগড়া, অতিরঞ্জিত কাহিনি হিসেবে উপস্থাপন করেন।
ভিডিওতে দাবি করা হয় যে, বৃদ্ধা মাকে দীর্ঘদিন ধরে খোপে আটকে রাখা হয়েছে। অথচ স্থানীয়রা জানান, এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। ছেলের অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রী সারাদিন মায়ের দেখভাল করেন। এমনকি প্রতিবেশীরাও কখনও বৃদ্ধাকে খোপে থাকতে দেখেননি। ইউটিউবারদের তৈরি ভিডিওটি শুধু মিথ্যা তথ্যেই ভরা নয়, তা বৃদ্ধার পরিবারকে সামাজিকভাবে হেয় করেছে ও মানহানিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
ঘটনার পর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বৃদ্ধার বাড়ি পরিদর্শন করেন পটুয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফাত আারা জামান উর্মি। তিনি জানান, বৃদ্ধা লাল বরু স্বাভাবিকভাবেই ছেলের সঙ্গে বসবাস করেন এবং তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে, তাকে খোপে আটকে রাখার অভিযোগ ভিত্তিহীন। ইউএনওর ভাষ্যমতে, বৃদ্ধার কিছু মানসিক সমস্যা থাকায় তিনি হয়তো খোপের কাছে গিয়ে কিছু সময় বসেছিলেন। তবে এটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নাটকীয়ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রশাসন, স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবার– সবাই একবাক্যে বলেছেন, ইউটিউবাররা ভিডিও ভাইরাল করার লোভে একটি নিরীহ পরিবারকে চরমভাবে হেনস্তা করেছে।
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল কনটেন্টের পেছনের সত্যতা যাচাই না করে প্রচার করা কতটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। মানবিক বিষয়ে গড়াপেটা গল্প বানিয়ে যে কেউ রাতারাতি তারকা হতে পারে, কিন্তু এর খেসারত দিতে হয় ভুক্তভোগী পরিবারকে, সমাজকে। স্থানীয়রা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ী ইউটিউবারদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
সূত্র:https://youtu.be/kEb7MzAHdZg?si=p2K1UUB_ZnkqtaWX
আঁখি