
ছবি: সংগৃহীত
মানুষের মতোই সামাজিক জীব হিসেবে বেঁচে থাকতে অনেক প্রাণী নির্ভর করে পারস্পরিক যোগাযোগের ওপর। তবে ডলফিনদের ক্ষেত্রে এই যোগাযোগ পদ্ধতিই যেন এক বিস্ময়! বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডলফিনদের ‘সিগনেচার হুইসেল’—তাদের পরিচয় জানানোর সুরেলা সংকেত। অনন্য ফ্রিকোয়েন্সির প্যাটার্ন ব্যবহার করে নিজেদের পরিচয় দেয় ডলফিনরা।
এক অদ্ভুত সামাজিক কাঠামো
ইন্দো-প্যাসিফিক বটলনোজ ডলফিনরা (Tursiops aduncus) গড়ে তোলে জটিল সামাজিক নেটওয়ার্ক। ঠিক যেমন আমাদের—কিছু ঘনিষ্ঠ, কিছু দূরত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে দরকার হয় নিয়মিত যোগাযোগ। এজন্যই তারা ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের শব্দ, যেমন—‘বার্স্ট পালস’ এবং ‘হুইসেল’।
এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ‘সিগনেচার হুইসেল’—প্রতিটি ডলফিনের একান্ত নিজস্ব এক ধরনের শব্দ, যা সে শিশু অবস্থায় রপ্ত করে এবং আজীবন ধরে রাখে। মানুষের নামে যেমন পরিচয় থাকে, ডলফিনদের ক্ষেত্রেও এই হুইসেল হয়ে ওঠে তাদের নামের মতোই।
কেবল পরিচয় নয়, আবেগও?
২০১৭ ও ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন উপকূলের ট্যাঙ্গালুমা আইল্যান্ডে একদল বিজ্ঞানী রেকর্ড করেন বহু ডলফিনের ‘সিগনেচার হুইসেল’। মজার বিষয় হলো—এই হুইসেলগুলো তাদের ফ্রিকোয়েন্সি প্যাটার্নে ছিল খুবই স্থিতিশীল, কিন্তু তবুও প্রতিবার কিছুটা ভিন্নতা ছিল। এবং এই পরিবর্তনগুলো গত ১৫ বছর ধরেও প্রায় একইভাবে রয়ে গেছে।
গবেষকরা বলছেন, এই ক্ষুদ্র পার্থক্যগুলো হতে পারে আবেগ, মনোভাব বা পরিস্থিতির সংকেত। যেমন—মানুষ মুখের নির্দিষ্ট কাঠামোর মাধ্যমে পরিচয় জানায়, কিন্তু হাসি, বিরক্তি বা ভয় প্রকাশ করে মুখভঙ্গির ভিন্নতায়। ডলফিনের হুইসেলও তেমন—পরিচয়ের পাশাপাশি প্রকাশ করে মুহূর্তের অনুভূতিও।
পুরুষ ডলফিনদের হুইসেলে বেশি ভিন্নতা!
গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষ ডলফিনরা তাদের সিগনেচার হুইসেলে নারীদের চেয়ে বেশি ভিন্নতা আনেন। এর কারণ হতে পারে পুরুষদের সামাজিক ভূমিকার পার্থক্য—তাদের অধিক প্রতিযোগিতা ও সম্পর্ক গঠনের চাপ। গবেষকেরা আরও একটি আশ্চর্য তথ্য পেয়েছেন—একটি নির্দিষ্ট হুইসেলের ধাঁচ কয়েকটি ডলফিনের মধ্যে একসাথে ব্যবহৃত হচ্ছে, অর্থাৎ তাদের মধ্যে গোষ্ঠীগত ‘পরিচয় সংকেত’ও থাকতে পারে!
ডলফিনরা তাদের হুইসেলের মাধ্যমে বন্ধু চিনে, শত্রু এড়িয়ে চলে, সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। এই গবেষণা নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করে। ডলফিনদের ‘সিগনেচার হুইসেল’ শুধু সংকেত নয়, বরং ভাষার মতো—যা দিয়ে তারা চেনে, বুঝে এবং অনুভব করে। তাদের জন্য এটা শুধু একটি শব্দ নয়, বরং সামাজিক জীবনের স্তম্ভ।
সূত্র: এনডিটিভি।
রাকিব