ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড়

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বিতর্কিত অভিবাসন নীতিতে ফিরে গেলেন। এবার তিনি ১২টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তার দাবি, “বিদেশি সন্ত্রাসী”দের হুমকি থেকে দেশকে রক্ষা করতেই এই পদক্ষেপ। নিষেধাজ্ঞাভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, ইরান, সোমালিয়া, ইয়েমেন, সুদান ও হাইতির মতো মুসলিমপ্রধান ও সংঘাতপীড়িত দেশ।

ট্রাম্প জানান, সম্প্রতি কলোরাডোর বোল্ডারে একটি সন্ত্রাসী হামলা তার এই সিদ্ধান্তের অন্যতম কারণ। যদিও অভিযুক্ত ব্যক্তি মিসরীয় নাগরিক এবং তার দেশ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নেই।

আন্তর্জাতিকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।

বিশ্বের প্রতিক্রিয়া:

আফগানিস্তান:

যেসব আফগান যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে তালেবান বিরোধী যুদ্ধে কাজ করেছেন, তারা বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হলে জীবনের ঝুঁকিতে পড়বেন।
২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিশৃঙ্খলভাবে আফগানিস্তান ত্যাগের পর, হাজারো আফগান পুনর্বাসনের জন্য মার্কিন কর্মসূচিতে অনুমোদন পেয়েছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প সেই কর্মসূচি স্থগিত করে রেখেছেন।

আফ্রিকান ইউনিয়ন (AU):

১২টি নিষিদ্ধ দেশের মধ্যে ৭টিই আফ্রিকার। AU বলেছে, এই সিদ্ধান্ত “মানবিক সম্পর্ক, শিক্ষাবিনিময়, বাণিজ্য এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের” ক্ষতি করবে। তারা যুক্তরাষ্ট্রকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউএসএ:

এই মানবাধিকার সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, “এই নিষেধাজ্ঞা বৈষম্যমূলক, বর্ণবাদী এবং নিষ্ঠুর। এটি কেবল ঘৃণা ও ভুল তথ্য ছড়ায়।”

চাদ:

চাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তারা এই নিষেধাজ্ঞায় বিস্মিত, কারণ চাদ সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টায় আন্তরিকভাবে যুক্ত।
চাদের প্রেসিডেন্ট পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য ভিসা দেওয়া বন্ধের নির্দেশ দেন।

কঙ্গো:

সরকারি মুখপাত্র বলছেন, “এটা নিশ্চয়ই একটা ভুল বোঝাবুঝি। কঙ্গো কোনো সন্ত্রাসী দেশ নয়, আমরা কোনো জঙ্গিকে আশ্রয় দেই না।”

ইরান:

জাতীয় ইরানি-আমেরিকান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট বলেন, “এই নিষেধাজ্ঞা আবারো অনেক আমেরিকান পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, যারা বিয়ে, মৃত্যু বা সন্তানের জন্মের সময় প্রিয়জনের পাশে থাকতে পারবেন না।”
তবে ইরানে থাকা একজন নাগরিক ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বলেছেন, “ভালো মানুষদের সঙ্গে সঙ্গে খারাপ লোকরাও ঢুকে পড়ে।”

অক্সফাম আমেরিকা:

এই দাতব্য সংস্থার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, “এই সিদ্ধান্ত জাতীয় নিরাপত্তার নামে বিভাজন সৃষ্টি এবং নিরাপদ জীবন খোঁজার চেষ্টা করা মানুষদের কলঙ্কিত করার জন্য নেওয়া হয়েছে।”

সোমালিয়া:

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সোমালিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ককে মূল্য দেয় এবং আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।

ভেনেজুয়েলা:

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞাকে "সবাইয়ের জন্য একটি বিপদ" বলে অভিহিত করেছেন এবং অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক ভেনেজুয়েলানকে মিথ্যা গ্যাং সদস্য পরিচয়ে নির্বাসিত করতে চাইছে।

সূত্র - https://www.aljazeera.com/news/2025/6/5/world-reacts-to-trumps-travel-ban-hits-several-nations-mired-in-conflict