
ছবি: সংগৃহীত
জাপানের কাতায়ামা দম্পতি থাকেন একই ছাদের নিচে। তবে আশ্চর্যের বিষয়—২০ বছর ধরে স্ত্রী ইউমি কাতায়ামার সঙ্গে কোনো কথা বলেননি স্বামী ওতুয়ে কাতায়ামা। অথচ সংসার চলছে, সন্তানও তিনজন।
ঘটনার শুরু তাদের প্রথম সন্তানের জন্মের পর। সেই সময় থেকেই স্ত্রীর ওপর একধরনের অভিমান পোষণ করেন ওতুয়ে। এরপর থেকেই স্ত্রীর সঙ্গে নীরবতা—না ঝগড়া, না কথাবার্তা।
বছরের পর বছর চলে যায়, জন্ম নেয় আরও দুই সন্তান। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। বাবা ও মায়ের মধ্যে কোনো কথা না শুনেই বড় হয়েছে সন্তানরা।
তবে ওতুয়ে শুধু স্ত্রীর সঙ্গেই কথা বলতেন না, সন্তানদের সঙ্গে ছিল স্বাভাবিক সম্পর্ক। ইউমি দিনরাত সংসার আর সন্তান সামলাতেন, আর স্বামীর মুখে কোনো কথা না পেয়ে একাই বলতেন নিজের মনের কথা।
যখনই কিছু জিজ্ঞেস করতেন ইউমি, ওতুয়ে মুখে কিছু না বলেই মাথা নাড়তেন ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বোঝাতে। এভাবেই স্ত্রীর সঙ্গে নীরব সহাবস্থান চালিয়ে যান দুই দশক ধরে।
এই বিস্ময়কর গল্প প্রকাশ্যে আসে ২০১৬ সালে, যখন তাদের ১৮ বছর বয়সী ছেলে ইয়োসিকি স্থানীয় একটি টিভি শোতে পুরো ঘটনা জানিয়ে অনুরোধ করেন—মা–বাবার সম্পর্ক যেন স্বাভাবিক করা হয়।
শোটির আয়োজকরা ইউমি ও সন্তানদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ইউমির একটি আবেগঘন ভিডিও বার্তা তৈরি করে ওতুয়েকে পাঠান।
ভিডিওতে ইউমি বলেন, ‘তোমার বয়স কত, তোমার প্রিয় খাবার কী, প্রিয় রঙ কী—সবই আমি জানি। আমি তোমার সঙ্গে একান্তে কথা বলতে চাই। আমি নারা পার্কে অপেক্ষা করব, তুমি কি আসবে?’
এই নারা পার্কেই তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। ইউমির ডাক পেয়ে ঠিক নির্দিষ্ট দিনে সেখানে উপস্থিত হন ওতুয়ে।
বেঞ্চে স্ত্রীর পাশে বসে কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকেন। এরপর ভেঙে পড়া গলায় বলেন, ‘অনেক দিন হয়ে গেছে আমাদের কথা হয়নি। তুমি সন্তানদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলে। তুমি অনেক কষ্ট সহ্য করেছ। আমি সবকিছুর জন্য কৃতজ্ঞ। আজ থেকে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই।’
সেই মুহূর্তে তাঁদের তিন সন্তান দূর থেকে দেখছিলেন এবং লুকানো মাইক্রোফোনে শুনছিলেন বাবা-মায়ের এই কথোপকথন। জীবনে প্রথমবার বাবা-মাকে কথা বলতে দেখে তারা অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি।
পরে শোটির আয়োজকেরা ওতুয়ের কাছে এতদিন স্ত্রীর সঙ্গে কথা না বলার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সন্তানদের প্রতি ইউমির অতিরিক্ত মনোযোগে আমি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েছিলাম, বিরক্তও ছিলাম। তাই একসময় কথা বলা বন্ধ করে দিই।’
তবে এই শো প্রচারের পর থেকে ওতুয়ে ও ইউমির মধ্যে আর কোনো নীরবতা নেই। তারা আবারও একসঙ্গে, কথা বলছেন, হাসছেন—যেন এক নতুন জীবনের শুরু।
সূত্র: ডেইলি মেইল
রাকিব