
ছবি: সংগৃহীত
পঁচিশ বা পঞ্চাশ বছর আগের পুরনো ক্যান খাবারের কথা শুনলেই দেহে শঙ্কা জাগে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এমনই এক ৫০ বছর আগের স্যালমনের টিন ক্যান খুলে এমন কিছু আবিষ্কার করেছেন যা শুধু নিরাপদই নয়, বরং মহাসাগরের স্বাস্থ্য সম্পর্কে এক যুগান্তকারী বার্তা দেয়।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল ১৯৭৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের ১৭০টির বেশি স্যালমনের টিনজাত ক্যান পরীক্ষা করেছেন। এর মধ্যে একটি ছিল প্রায় ৫০ বছর পুরনো, যেটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ। অথচ ক্যানটি খোলার পর ভেতরে যে কিছু পাওয়া গেল তা বিজ্ঞানীদের অবাক করে দেয়।
এই গবেষণার মূল আকর্ষণ ছিল একটি বিশেষ সামুদ্রিক পরজীবী — অ্যানিসাকিডস (Anisakid), যা ক্যানের ভেতরে একেবারে অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষিত ছিল। যদিও সাধারণত পরজীবী শুনলেই ক্ষতিকর মনে হয়, তবে এটির উপস্থিতি একবারে বিপরীত ইঙ্গিত দেয়।
গবেষণার সহ-লেখক চেলসি উড জানান, "এই পরজীবীর উপস্থিতি প্রমাণ করে যে মাছটি একটি সুস্থ সামুদ্রিক পরিবেশ থেকে এসেছে।" অ্যানিসাকিডস পরজীবীরা একটি জটিল খাদ্য চক্রের অংশ। প্রথমে তারা খায় সামুদ্রিক কৃল (krill), তারপর সেই কৃল খেয়ে ফেলে মাছ যেমন স্যালমন, এরপর ওই মাছ খেয়ে নেয় সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীরা। ফলে এই পরজীবীর উপস্থিতি মানে সমুদ্রের খাদ্য চক্র এখনো কার্যকর এবং টেকসই।
বিভিন্ন দশকের ক্যানের মধ্যে তুলনা করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, অ্যানিসাকিডস-এর উপস্থিতি সময়ের সঙ্গে বেড়েছে। এটা হয়তো সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের একটি চিহ্ন, কিংবা উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধির ফলাফল। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও এখানে অগ্রাহ্য করা যাচ্ছে না।
যদিও গবেষণার দৃষ্টিকোণ থেকে এই পরজীবীরা উপকারী বার্তা দেয়, কিন্তু মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য তারা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। কাঁচা মাছ খেলে এগুলো ফুড পয়জনিংয়ের কারণ হতে পারে। তবে ক্যানজাত খাবারে এই ভয় নেই। কারণ, ক্যানিং প্রক্রিয়ায় উচ্চ তাপে জীবাণুনাশ করা হয়, যা সব পরজীবী মেরে ফেলে। ফলে টিনজাত সালমন পুরোপুরি নিরাপদ।
এই গবেষণা নতুন এক পথ দেখাচ্ছে। ভবিষ্যতে গবেষকরা আরো পুরাতন ক্যান ও সংরক্ষিত সামুদ্রিক খাবার বিশ্লেষণ করে জলবায়ু পরিবর্তন ও সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করতে চান।
মুমু ২