
ছবি: জনকণ্ঠ
পবিত্র ঈদুল আজহায় পশু কোরবানির কাজে ছুরি, বটি, চাপাতিসহ ধাতব হাতিয়ারের পাশাপাশি বিশেষভাবে প্রয়োজন হয় তেঁতুল ও কদবেল গাছের খাটিয়া। মাঝারি আকৃতির এই গাছের শেষ ভাগ গোলাকৃতি করে কেটে ১৬ থেকে ২০ ইঞ্চি পুরুত্বে খাটিয়া তৈরি করা হয়। মূলত মাংস কাটার সুবিধার্থেই এসব খাটিয়া ব্যবহৃত হয়।
জেলার প্রতিটি কোরবানির হাট এবং শহরের কাঠের দোকানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে এই খাটিয়া। তেঁতুল ও কদবেল গাছের সংকটের কারণে এ বছর খাটিয়ার দাম বেড়েছে। সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খাটিয়া, তবে আকার ও পুরুত্ব অনুসারে দাম কম-বেশি হয়।
নীলফামারীর কালিতলা হাটে খাটিয়া ব্যবসায়ী আলম হোসেন বলেন, “শুধু কোরবানির ঈদেই খাটিয়া বিক্রি হয়। অন্যান্য সময় এর তেমন চাহিদা নেই। গাছের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার খাটিয়ার দামও বেড়েছে। গতবারের চেয়ে প্রতিটি খাটিয়া ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “ক্রেতারা তেঁতুল ও কদবেল গাছের খাটিয়া বেশি পছন্দ করেন। এগুলো দীর্ঘদিন পানিতে ভেজা থাকলেও সহজে নষ্ট হয় না। স্থানীয় বাজার ছাড়াও এসব খাটিয়া ঢাকায় সরবরাহ করা হয়। এখানে যে খাটিয়া ২০০ টাকায় বিক্রি হয়, সেটিই ঢাকায় ৪০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।”
ক্রেতা রোস্তম আলী জানান, “কোরবানির সময় খাটিয়া অপরিহার্য। সারা বছর কেউ এসব সংরক্ষণ করে না, তাই প্রতিবছর নতুন করে কিনতে হয়। এবার দাম বেশি হলেও কিনতে হচ্ছে।”
আরেক ব্যবসায়ী জব্বার মিয়া জানান, “চাহিদা থাকলেও এবার এখন পর্যন্ত বেচাকেনা কম।” তবে জেলার সৈয়দপুর এলাকায় খাটিয়ার চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেশি। শহরের রেললাইনের পাশে ও পাড়া-মহল্লার মোড়ে খাটিয়া সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
সৈয়দপুরের ব্যবসায়ী আসলাম ও নূর-এ-সাফা বলেন, “তেঁতুল ও কদবেল গাছের কাঠ খুবই মজবুত। অন্যান্য গাছের খাটিয়া দা বা ছুরির আঘাত সহ্য করতে পারে না।” তাঁরা জানান, করাতকল ও মহাজনের কাছ থেকে ছোট ছোট কাঠের গুঁড়ি কিনে সেগুলো নির্দিষ্ট মাপে কেটে খাটিয়া তৈরি করা হয়। কসাইরা সারা বছরই এই খাটিয়া ব্যবহার করেন।
এদিকে, দেশীয় হাতিয়ারের বাজারেও বিদেশি পণ্যের দখলদারিত্ব লক্ষ্য করা গেছে। বাজারে চীন ও ভারত থেকে আমদানি করা হালকা, ঝকঝকে ও ধারালো ছুরি-চাপাতির প্রতি ক্রেতাদের ঝোঁক বেশি।
স্থানীয় কামারদের তৈরি দেশি হাতিয়ার কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। মাঝারি আকারের চাপাতি ৬০০-৭০০ টাকা, আর বড় আকারের দাম আরও বেশি। অন্যদিকে, বিদেশি চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকায় এবং ছুরি ১০০ থেকে ৩০০ টাকায়।
চিলাহাটির কামার রবিউল ইসলাম বলেন, “দেশি হাতিয়ার মজবুত হলেও বিদেশি হাতিয়ারের ঝকঝকে রূপে মানুষ আকৃষ্ট হয়। আগে ঈদের সময় প্রচুর অর্ডার থাকতো, এখন নেই। অনেকেই ঝামেলা এড়িয়ে কসাই ভাড়া করে কাজ সেরে নেয়। ফলে আমাদের চাহিদা কমেছে।”
তিনি আরও বলেন, “তবে বড় হাতিয়ারের এখনো চাহিদা আছে। এসবের দাম এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত।”
শহীদ