
এক সময় গাইবান্ধা জেলার মাঠঘাটে প্রতিদিন ভোর হলেই শোনা যেত গরুর ঘন্টার শব্দ। কৃষকের হাতে লাঙল আর গরুর গলায় জোয়াল—এই ছিল চিরচেনা দৃশ্য। কিন্তু সময় বদলেছে, বদলেছে কৃষিকাজের ধরন। যান্ত্রিকতার ছোঁয়ায় আজ বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ হালচাষের ঐতিহ্য।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার এক সময়ের অভিজ্ঞ কৃষক আবু বক্কর বলেন, “আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন পাড়ার সব কৃষকই হাল দিয়ে জমি চাষ করত। গরু ছাড়া জমি চাষ কল্পনাও করা যেত না। এখন তো সবাই ট্রাক্টর আর পাওয়ার টিলার ব্যবহার করছে। গরু পালা, হাল বানানো—সবই হারিয়ে যাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “হাল দিয়ে জমি চাষে একটা আত্মিক তৃপ্তি ছিল। কিন্তু এখন কেউ সেই কষ্ট করতে চায় না। গরু পালার খরচ, সময়, শ্রম—সব কিছু মিলিয়ে অনেকেই হাল ছেড়ে যন্ত্রে ভরসা করছে।”
উপসহকারী কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম জানান, “প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে কৃষকরা এখন কম সময়ে বেশি জমি চাষ করতে পারছেন, যা উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করছে। তবে হালচাষ একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি, যা মাটির প্রাকৃতিক গঠন রক্ষা করে। একেবারে এটা হারিয়ে যাওয়া আমাদের কৃষি ঐতিহ্যের জন্য ক্ষতিকর।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই, কৃষকরা যেন সচেতন হয়—সবসময় যন্ত্রের ওপর নির্ভর না করে কখনো কখনো হালচাষের উপযোগিতা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়।”
গাইবান্ধার অনেক কৃষকই মনে করেন, হালচাষ শুধু কৃষির অংশ নয়, এটি একটি সংস্কৃতি, একটি ঐতিহ্য। হাল দিয়ে চাষাবাদে যে আত্মিক টান, পারস্পরিক সহযোগিতা, আর গ্রামীণ সৌন্দর্য ফুটে উঠত, তা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। এক সময় কৃষকরা একে অপরের জমি হাল দিয়ে সহযোগিতা করত, এখন সেই আন্তরিকতা অনেকটাই কমে গেছে।
রাজু