ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

এলন মাস্কের ৫ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাবে ‘না’ বলেছিলেন টিম কুক,এর খেসারত

প্রকাশিত: ০৯:০১, ৫ জুন ২০২৫

এলন মাস্কের ৫ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাবে ‘না’ বলেছিলেন টিম কুক,এর খেসারত

প্রযুক্তির দুনিয়ায় এলন মাস্ক মানেই চমক। আর সেই চমকের মুখে যদি থাকে অ্যাপলের মতো জায়ান্ট, তাহলে তো আগ্রহের পারদ চড়বেই। ২০২২ সালে ঠিক এমনই এক ঘটনার জন্ম দিয়েছিলেন মাস্ক। আইফোনে স্যাটেলাইট সংযোগ দিতে অ্যাপলকে ৫ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। সময় দিয়েছিলেন মাত্র ৭২ ঘণ্টা। তবে অ্যাপলের সিইও টিম কুক সেই প্রস্তাবে রাজি হননি। তারপর? মাস্ক নিজের পথেই হাঁটলেন আর তাতেই বড়সড় চাপে পড়েছে অ্যাপল।

২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়। অ্যাপল তখন আইফোন ১৪ উন্মোচনের ঠিক আগের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। এমন সময় স্পেসএক্সের পক্ষ থেকে এল এক মোটা অঙ্কের প্রস্তাব আইফোনে সরাসরি স্যাটেলাইট সংযোগ দেবে স্পেসএক্স, বিনিময়ে অ্যাপলকে দিতে হবে ৫ বিলিয়ন ডলার অগ্রিম। সঙ্গে ছিল আরও একটি শর্ত ১৮ মাসের একচেটিয়া চুক্তি শেষ হলে প্রতিবছর লাগবে আরও ১ বিলিয়ন ডলার।

এমন প্রস্তাব সহজে কেউ ফেরায় না। মাস্কও হয়তো তাই ভাবছিলেন। টিম কুককে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিলেনরাজি না হলে আমি নিজেই বিকল্প সেবা চালু করব, যা আইফোনেও কাজ করবে।

টিম কুক সোজাসুজি মাস্কের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। অ্যাপল বরং গ্লোবালস্টার নামের তুলনামূলক ছোট এক স্যাটেলাইট কোম্পানির সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও মাস্কের অফারে প্রযুক্তিগত দিক থেকে বড় সুবিধা ছিল, তবে অ্যাপলের কাছে সুরক্ষা, নিয়ন্ত্রণ আর দীর্ঘমেয়াদি কৌশলটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

তবে মাস্ক হাল ছাড়েননি। কথা রেখেই কিছু মাসের মধ্যেই স্পেসএক্স ও টি-মোবাইল একত্রে চালু করে ‘স্টারলিংক ডাইরেক্ট টু সেল’ নামের নতুন এক সেবা। এটি সরাসরি মোবাইলে স্যাটেলাইট সংযোগ দেয়। যদিও শুরুতে কেবল টি-মোবাইল গ্রাহকরাই এর সুবিধা পান, তবুও এটি ছিল এক বিশাল পদক্ষেপ।

স্যাটেলাইট সেবার জায়গায় মাস্কের এন্ট্রি অ্যাপল-গ্লোবালস্টার জুটির জন্য অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু গল্প এখানেই শেষ হয়নি। স্পেসএক্স এবার সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে গ্লোবালস্টারের মালিকানাধীন গুরুত্বপূর্ণ এক তরঙ্গ ব্যান্ড নিয়ে। তাদের অভিযোগ, গ্লোবালস্টার সে তরঙ্গ সঠিকভাবে ব্যবহার করছে না, বরং প্রতিযোগীদের ঠেকানোর কৌশল হিসেবেই আটকে রেখেছে।

এই আইনি লড়াই অ্যাপলের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ আইফোনের স্যাটেলাইট সেবা এই তরঙ্গের ওপরই নির্ভরশীল। যদি স্পেসএক্স এই যুদ্ধে জিতে যায়, অ্যাপলকে নতুন স্যাটেলাইট সেবা খুঁজতে হতে পারে।

বাইরের চাপের পাশাপাশি অ্যাপলের ভেতর থেকেও গ্লোবালস্টার নিয়ে অসন্তোষের সুর শোনা যাচ্ছিল। অ্যাপলের সফটওয়্যার প্রধান ক্রেইগ ফেডেরিগি ও করপোরেট উন্নয়ন বিভাগের প্রধান অ্যাড্রিয়ান পেরিকা নাকি স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেন, গ্লোবালস্টারের প্রযুক্তি অনেকটাই পুরোনো, গতি কম, এবং ভবিষ্যতে খুব একটা উন্নতির সম্ভাবনাও নেই।

তাদের আরও আশঙ্কা ছিল গ্লোবালস্টারের ওপর এতটা নির্ভরতা অ্যাপলকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে পারে, যেখানে কোম্পানিটিকে টেলিকম অপারেটর হিসেবে চিহ্নিত করা হতে পারে। আর সেটি হলে আইনি ঝামেলাও বাড়বে।

তবুও অ্যাপল থেমে থাকেনি। গ্লোবালস্টারে ১.৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যার মধ্যে ১.১ বিলিয়নই নতুন স্যাটেলাইট নির্মাণ ও উৎক্ষেপণে। অ্যাপল দেখিয়ে দিয়েছে, তারা আইফোন ব্যবহারকারীদের স্যাটেলাইট সংযোগ দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু মাস্কের চাপ আর ভেতরের দ্বিধা দুটোই আজ তাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।


একদিকে এলন মাস্কের স্পেসএক্স, অন্যদিকে টিম কুকের অ্যাপল। মাঝখানে রয়েছে স্মার্টফোনের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি স্যাটেলাইট সংযোগ। মাস্ক প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কুক ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ‘না’ বলার সিদ্ধান্ত আজ অ্যাপলের জন্য যে কতটা ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে, সেটা দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে। এই লড়াই এখানেই শেষ হচ্ছে না, বরং ভবিষ্যতে আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। প্রযুক্তির দুনিয়ায় যুদ্ধে টিকে থাকার জন্য যে একচেটিয়া আধিপত্যই যথেষ্ট নয়, সেটা হয়তো এখনই সবচেয়ে বেশি বুঝছে অ্যাপল।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/28re4cfu

আফরোজা

আরো পড়ুন  

×