
সংগৃহীত
বিশ্বব্যাপী চেরির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে ২০২৪-২৫ মৌসুমে সবচেয়ে বেশি চেরি উৎপাদনকারী দেশগুলোর তালিকা। তথ্য অনুযায়ী, তুরস্ক চেরি উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে। একাধিক আন্তর্জাতিক কৃষি ও বাণিজ্য সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি এই তালিকা থেকে দেখা যাচ্ছে, চেরি উৎপাদনে ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করছে চীন, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও চিলির মতো দেশগুলো।
চেরি একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফল ও ডেজার্ট হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ফলটি শুধু খেতেই ভালো নয়, এটি রপ্তানি আয়ের একটি বড় উৎসও হয়ে উঠেছে অনেক দেশের জন্য।
চেরি উৎপাদনে শীর্ষ দেশগুলো:
১. তুরস্ক
তুরস্ক চেরি উৎপাদনে বিশ্বে এক নম্বরে রয়েছে। দেশটির উষ্ণ জলবায়ু ও সমতল ভূমি চেরি চাষের জন্য আদর্শ। এখানে প্রতি বছর প্রায় "৯ লাখ মেট্রিক টন" চেরি উৎপাদিত হয়। দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার ছাড়াও তুরস্ক চেরি রপ্তানি করে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশে।
২. চীন
চীন বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চেরি উৎপাদনকারী দেশ। দেশটি বছরে "৮.৫ লাখ মেট্রিক টন" চেরি উৎপাদন করে। চীনের শানডং, লিয়াওনিং ও শানসি প্রদেশে চেরির বিস্তৃত চাষ হয়। দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজারে চেরির চাহিদা অনেক বেশি, তবে রপ্তানিতেও নজর দিচ্ছে সরকার।
৩. ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)
ইইউভুক্ত দেশগুলো মিলিয়ে প্রতি বছর "প্রায় ৭.১৫ লাখ মেট্রিক টন" চেরি উৎপাদিত হয়। পোল্যান্ড, ইতালি ও স্পেন এই উৎপাদনের মূল কেন্দ্র। আবহাওয়ার ওঠানামা উৎপাদনে প্রভাব ফেললেও ইউরোপের বাজারে চেরির চাহিদা স্থিতিশীল।
৪. চিলি
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলি চেরি উৎপাদনে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। দেশটি প্রতিবছর প্রায় "৫ লাখ মেট্রিক টন" চেরি উৎপাদন করে। দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত হওয়ায় চিলির চেরি উত্তরের শীত মৌসুমে বাজারে আসে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে বিশেষ চাহিদা তৈরি করে। চিলির সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য হলো চীন।
৫. যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন, ওরেগন এবং ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে চেরির চাষ সবচেয়ে বেশি হয়। দেশটি বছরে "প্রায় ৪.১৩ লাখ মেট্রিক টন" চেরি উৎপাদন করে। আমেরিকায় মিষ্টি ও টক দুই ধরনের চেরিই চাষ হয় এবং সেগুলো স্থানীয় চাহিদা পূরণ ছাড়াও রপ্তানি করা হয়।
৬. রাশিয়া
রাশিয়া বছরে প্রায় "৩.৫ লাখ মেট্রিক টন" চেরি উৎপাদন করে, যা মূলত দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে ব্যবহৃত হয়। টক চেরি উৎপাদনে রাশিয়া শীর্ষে রয়েছে।
৭. উজবেকিস্তান
উজবেকিস্তানেও চেরি উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। দেশটি বছরে "প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন" চেরি উৎপাদন করে। এখানে চেরি একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে চাষ হয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করা হয়।
৮. ইরান, ইউক্রেন ও সার্বিয়া
এই তিন দেশও যথাক্রমে "প্রায় ২.৪ লাখ, ২.৩ লাখ ও ১.৮ লাখ মেট্রিক টন" চেরি উৎপাদন করে। তারা মূলত আঞ্চলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কিছু অংশ রপ্তানিও করে থাকে।
চেরি উৎপাদনের এই বৈশ্বিক চিত্র থেকে বোঝা যায়, আবহাওয়া, প্রযুক্তি ও কৃষক প্রশিক্ষণের ওপর নির্ভর করেই একটি দেশ কীভাবে চেরির মতো গুরুত্বপূর্ণ ফলের উৎপাদনে এগিয়ে যেতে পারে। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন ও চাষযোগ্য জমির সংকট সত্ত্বেও কিছু দেশ আধুনিক প্রযুক্তি ও পরিকল্পিত কৃষির মাধ্যমে উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হয়েছে।
বিশ্বের ফল রপ্তানি বাজারে চেরি ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ একটি অবস্থান তৈরি করছে, যা ভবিষ্যতে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে।
হ্যাপী