ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আমাদের গ্যালাক্সি নিয়ে শতবছরের ধারণা ভুল, যা বলছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৪ জুন ২০২৫

আমাদের গ্যালাক্সি নিয়ে শতবছরের ধারণা ভুল, যা বলছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা

ছবি: সংগৃহীত

যে মহাজাগতিক সংঘর্ষকে শতবছর ধরে ‘অপরিহার্য’ বলে ভাবা হচ্ছিল, তা হয়তো আদৌ ঘটবে না—এমনটাই বলছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি ও এর বৃহত্তম প্রতিবেশী অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির মধ্যে আসন্ন মহাজাগতিক সংঘর্ষ নিয়ে বিজ্ঞানীরা এতদিন যা ভেবেছিলেন, নতুন গবেষণায় তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

১৯১২ সাল থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল, প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর পর এই দুই গ্যালাক্সির মধ্যে সংঘর্ষ ঘটবে। তবে সম্প্রতি Nature Astronomy জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, এই সংঘর্ষের সম্ভাবনা মাত্র ২ শতাংশ—যেটা এতদিনের পূর্বাভাসের তুলনায় অনেক কম।

কেন বদলে গেল হিসাব?

গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে হাবল ও গাইয়া টেলিস্কোপের সাম্প্রতিক তথ্য এবং ১,০০,০০০ সম্ভাব্য সিমুলেশন। সেখানে মিল্কিওয়ে ও অ্যান্ড্রোমিডার পাশাপাশি বিবেচনায় আনা হয়েছে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ গ্যালাক্সির মহাকর্ষীয় প্রভাব—যেমন, লার্জ ম্যাজেলানিক ক্লাউড (LMC) ও ট্রায়াঙ্গুলাম গ্যালাক্সি (M33)। এগুলো মিল্কিওয়ে ও অ্যান্ড্রোমিডার গতি ও কক্ষপথে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে।

মূল গবেষক ড. টিল সাওয়ালা (হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়) বলেন, ‘LMC-এর মহাকর্ষীয় টান মিল্কিওয়েকে অ্যান্ড্রোমিডার সাথে সংঘর্ষপথ থেকে কিছুটা বিচ্যুত করেছে। আবার M33 অ্যান্ড্রোমিডাকে একটু বেশি আকর্ষণ করে, ফলে মিল্কিওয়ের থেকে দূরে টেনে নিয়ে যেতে পারে।’

কী ঘটতে পারে ভবিষ্যতে?

গবেষণায় দেখা গেছে, আগামী ১০ বিলিয়ন বছরের মধ্যে এই দুই গ্যালাক্সির সংঘর্ষের সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ, এখন আর নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না মিল্কিওয়ে ও অ্যান্ড্রোমিডার ‘মিলকমিডা’ নামে পরিচিত ভয়ঙ্কর একীভবন ঘটবেই।

একটি সংঘর্ষ হলে দুই গ্যালাক্সির সর্পিল গঠন ধ্বংস হয়ে দীর্ঘ ও অস্পষ্ট ডিম্বাকৃতি গ্যালাক্সিতে রূপ নেবে। বিশাল গ্যাসের সঞ্চালন ব্ল্যাক হোলকে সক্রিয় করে বিকিরণ ছড়াবে, তৈরি হবে হাজার হাজার নতুন তারা, এবং পরবর্তীতে তারার সৃষ্টি বন্ধ হয়ে যাবে।

গবেষক ড. কার্লোস ফ্রেঙ্ক (ডারহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়) বলেন, ‘আমরা এতদিন ধরে ভেবেছি এই ভয়াবহ পরিণতি আমাদের গ্যালাক্সির জন্য অনিবার্য। এখন দেখা যাচ্ছে, সেই সম্ভাবনা অনেক কম।’

মিল্কিওয়ে ও LMC: সংঘর্ষ আরও কাছে?

গবেষণাটি আরও বলছে, মিল্কিওয়ে ও LMC-এর সংঘর্ষ আগামী ২ বিলিয়ন বছরের মধ্যেই ঘটবে—যা প্রায় নিশ্চিত। যদিও এটি অ্যান্ড্রোমিডার মত ভয়াবহ না হলেও, মিল্কিওয়ের কেন্দ্রীয় ব্ল্যাক হোল ও গ্যালাকটিক হ্যালোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।

তবে পৃথিবীর ভাগ্য কী?

সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য হলো—এই গ্যালাকটিক সংঘর্ষের তুলনায় আমাদের সূর্যের মৃত্যুই পৃথিবীর জন্য বড় বিপদ। নাসার তথ্য মতে, আগামী ৫ বিলিয়ন বছরে সূর্য ফুলে উঠে রেড জায়ান্টে রূপ নেবে এবং সম্ভবত বুধ, শুক্র ও পৃথিবীকে গ্রাস করবে।

ড. সাওয়ালা বলেন, ‘সূর্যের শেষ পরিণতিই পৃথিবীর ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। গ্যালাক্সির সংঘর্ষে পৃথিবী ধ্বংস না-ও হতে পারে, কারণ তারা বা গ্রহের সরাসরি সংঘর্ষ খুবই বিরল।’

মিল্কিওয়ের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত

গবেষকেরা জানাচ্ছেন, গ্যালাক্সিগুলোর ভর, গতি এবং কক্ষপথ নিয়ে অনেক অজানা তথ্য রয়েছে। ফলে শতভাগ নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয় ভবিষ্যতে কী হবে। তবে ২০২৬ সালে গাইয়া স্পেস টেলিস্কোপের নতুন ডেটা এই পূর্বাভাসগুলোকে আরও নির্ভুল করে তুলবে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।

 

সূত্র: সিএনএন।

রাকিব

×