ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

প্রতিদিন গাজর-আদার জুস পান করলে যেসব অসাধারণ উপকার পাবেন!

প্রকাশিত: ০৭:৩৫, ৪ জুন ২০২৫

প্রতিদিন গাজর-আদার জুস পান করলে যেসব অসাধারণ উপকার পাবেন!

ছবিঃ সংগৃহীত

প্রতিদিন গাজর ও আদার জুস পান করা আপনার শরীরের জন্য হতে পারে একটি চমৎকার অভ্যাস। এই প্রাকৃতিক পানীয়টিতে রয়েছে হজমশক্তি বৃদ্ধিকারী উপাদান, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করার শক্তি, ত্বককে উজ্জ্বল রাখার গুণ এবং এমনকি ওজন কমাতেও এটি সাহায্য করতে পারে।

১. হজমশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে

আদা প্রাচীনকাল থেকেই হজমের জন্য পরিচিত একটি ভেষজ উপাদান। এটি আমাদের পরিপাকতন্ত্রে থাকা ‘গাট মাইক্রোবায়োম’ তথা উপকারী জীবাণুদের কার্যক্ষমতা উন্নত করে। এমনকি স্বল্পমেয়াদে আদা সেবনও এই জীবাণুগুলোর বৈচিত্র্য ও কার্যক্ষমতা বাড়াতে পারে।

আদা বমিভাব দূর করতেও কার্যকর, এবং এটি পেটের প্রদাহ কমায় — বিশেষ করে হজম সংক্রান্ত প্রদাহে ভালো কাজ করে।

২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

আদায় রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি (প্রদাহনাশক) ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ, যা কোষকে ক্ষতি ও রোগ থেকে রক্ষা করে। এ গুণের পেছনে রয়েছে আদার উপাদান যেমন জিঞ্জেরল, শোগাওলস, প্যারাডল ও জিঞ্জারোন।

গাজরেও রয়েছে ইমিউন-বুস্টিং উপাদান। এতে থাকা প্রাকৃতিক যৌগ ফ্যালকারিনল (FaOH) ও ফ্যালকারিনডিয়ল (FaDOH) শরীরের সাইটোকাইন ও সাদা রক্তকণিকা সক্রিয় করে, যা রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

এছাড়া, গাজর বিটা-ক্যারোটিনের দুর্দান্ত উৎস — যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, প্রদাহ কমায় এবং ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।

৩. ত্বক হয়ে উঠতে পারে আরও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল

গবেষণা বলছে, বিটা-ক্যারোটিন ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। এটি কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে বাঁচায়। তবে আমাদের শরীর প্রতিনিয়ত এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হারায়, তাই প্রতিদিন গাজর-আদার জুসের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ জরুরি।

৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে

শাকসবজি গ্রহণ ও ওজন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে। এক গবেষণায় দেখা যায়, আদা গ্রহণ শরীরের ওজন ও কোমর-নিতম্ব অনুপাতে (waist-to-hip ratio) হ্রাস ঘটাতে পারে — যা হৃদরোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি সূচক।

একটি বৃহৎ গবেষণায় (১২,০০০ জন প্রাপ্তবয়স্ক) দেখা যায়, বিশেষ একটি জিন ভ্যারিয়েন্ট (rs4445711) যাদের রয়েছে, তারা গাজর খেয়ে তুলনামূলক বেশি ওজন কমাতে সক্ষম হন। এই প্রভাবটি অন্য কোনো সবজির ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।

৫. হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে

এক গবেষণায় উচ্চ কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড রয়েছে এমন ১৭ জন প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিদিন ১৬ আউন্স (২ কাপ) করে গাজরের রস পান করেন তিন মাস ধরে। যদিও তাদের রক্তে ফ্যাটের পরিমাণে তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি, তবে রক্তচাপ কমে যায় এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্ট্যাটাস বৃদ্ধি পায় — যা হৃদযন্ত্রের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত।

আদা হৃদরোগ প্রতিরোধে প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে এক পর্যালোচনায়। এটি রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমায়, রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও তুলনামূলক কম।

কখন পান করবেন এই জুস?

চিনিমুক্ত গাজর-আদার জুস প্রতিদিনের ডায়েটে যুক্ত করা নিরাপদ। আপনি সকালে খালি পেটে পান করতেও পারেন, আবার খাবারের সঙ্গে বা পরে পান করাও উপকারী।

যে সময় আপনার শরীর ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারে, সেটাই আপনার জন্য সেরা সময়।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সতর্কতা

যদিও এটি সাধারণত নিরাপদ, তবে কিছু লোকের ক্ষেত্রে আদা অতিরিক্ত গ্রহণে অম্বল বা পেটের অস্বস্তি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনি গাজর-হলুদ (turmeric) জুস বিবেচনা করতে পারেন।

অতিরিক্ত গাজরের রস পান করলে “ক্যারোটিনেমিয়া” নামে একটি সাময়িক অবস্থা দেখা দিতে পারে, যার ফলে ত্বকে হলুদ-কমলা আভা দেখা দেয়। এটি ক্ষতিকর নয়।

কারা এড়িয়ে চলবেন?

যাদের গাজর-আদার জুস পান করে অস্বস্তি হয়, তাদের এটি এড়িয়ে চলাই ভালো।

বিশেষ করে যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ গ্রহণ করছেন, তাদের আদা বা গাজর-আদার জুস নিয়মিত পান করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আদার প্রাকৃতিক ব্লাড-থিনিং গুণ রয়েছে — যা ওষুধের সঙ্গে পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে।

মূল কথা

প্রতিদিন গাজর ও আদার জুস পান করলে হজমশক্তি বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ, ত্বকের উজ্জ্বলতা, হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের মতো বহু উপকার পাওয়া যায়।
এতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহনাশক উপাদান, এবং সাধারণত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও খুব কম।

তবে যেকোনো পরিবর্তনের আগে নিজের শরীরকে পর্যবেক্ষণ করুন এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। আপনিই আপনার সুস্বাস্থ্যের রক্ষক।

সূত্রঃ https://www.verywellhealth.com/carrot-and-ginger-juice-11741943

ইমরান

×