ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জুলাই রেভ্যুলেশনারি এলায়েন্স

আন্দোলনে পুলিশ গুলি ছুঁড়লে শহীদ মিরাজ পিছপা না হয়ে বন্ধুদের বলতেন, সবাই ভয়ে দৌড়ে পালালে আন্দোলন সফল হবে কীভাবে!

প্রকাশিত: ০১:৫৬, ৬ জুন ২০২৫; আপডেট: ০১:৫৭, ৬ জুন ২০২৫

আন্দোলনে পুলিশ গুলি ছুঁড়লে শহীদ মিরাজ পিছপা না হয়ে বন্ধুদের বলতেন, সবাই ভয়ে দৌড়ে পালালে আন্দোলন সফল হবে কীভাবে!

জুলাই রেভ্যুলেশনারি এলায়েন্স তাদের ফেসবুক পেইজে শেয়ার করেছেন যাত্রাবাড়ীতে শহীদ মিরাজের আন্দোলনের বর্ণনা। 

বলা হয়েছে- নামঃ শহীদ মিরাজ হোসেন

শহীদ হওয়ার স্থান-যাত্রাবাড়ী।

আন্দোলনে পুলিশ গুলি ছুঁড়লে সবাই যখন দৌড়ে পালাতো, তখনও শহীদ মিরাজ একটুও পিছপা হতেন না। বন্ধুদেরকে বলতেন, সবাই ভয়ে দৌড়ে পালালে আন্দোলন সফল হবে কীভাবে! ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় থাকা শহীদ মিরাজ জুলাই বিপ্লবেও আন্দোলনের শুরু থেকেই অংশগ্রহণ করতে একটুও দ্বিধা করেননি। সবসময় বন্ধুদেরকেও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করতেন। কিন্তু পরিবারের কাউকেই জানতে দিতেন না যে তিনি আন্দোলনে যাচ্ছেন নিয়মিত।

৪ই আগস্ট বাসায় প্রথম জানতে পারেন যে মিরাজ নিয়মিত আন্দোলনে যান। তখন মিরাজ বলেন যে, যেখানে রিকশাচালকরা রাস্তায় নেমে গেছে আন্দোলনে, তখন আমরা বাসায় বসে থাকবো কেন? আমরা আবার আমাদের দেশটা স্বাধীন করবো! ছোটবেলা থেকেই গাড়ি চালক বাবা অসুস্থ থাকায় একাই সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয় শহীদ মিরাজকে। নিজের চাহিদা উপেক্ষা করে ফ্রিল্যান্সারের কাজ করে বাবা-মায়ের চিকিৎসা, ভাইয়ের দাবার ক্যারিয়ার, বিবাহ বিচ্ছেদপ্রাপ্তা বোন সহ সবার দায়িত্ব একহাতে পালন করছিলেন মিরাজ। টাকার অভাবে সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে অনার্স করার পরও মাস্টার্সটা করতে পারেননি।

৫ই আগস্ট ২০২৪ সেদিন সকাল আটটায় বাসায় রান্না না হওয়ায় দোকান থেকে নিয়ে আসা দুইটা পরোটা খেয়েই আন্দোলনে বের হয়ে যান মিরাজ। এরপর আর কখনো মিরাজের সাথে ফোনে কথা হয়নি পরিবারের কারো। অন্যান্য দিনের মতোই সব বন্ধুদেরকে ফোন করে-করে আন্দোলনে আসতে বলেন মিরাজ। যে বন্ধুরা বেশি স্বাস্থ্যবান ওদেরকে দৌড়াতে পারবে না বলে আন্দোলনে নিয়ে যেতে চান না, যারা হালকা গড়নের অধিকারী ওদেরকেই নিজের সাথে আন্দোলনে নিয়ে যেতে চান। সব বন্ধুদেরকে নিজের টাকা দিয়ে জাতীয় পতাকা কিনে-কিনে দিয়ে কারফিউ ভেঙ্গে লংমার্চে অংশগ্রহণ করে শাহবাগ অভিমুখে যাত্রা করতে চান মিরাজ।

এসময় যখন বন্ধুরা তাঁকে ফোন করে সাবধান থাকতে বলতো, তখন তিনি বলতেন এত সাবধান থাকলে দেশ স্বাধীন হবে কীভাবে! তিনটার দিকে শেখ হাসিনার পালানোর খবর পেয়ে সবাই যখন বিজয় মিছিল নিয়ে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে পৌঁছালো তখন পুলিশ থানা থেকে গুলি ছুঁড়তে-ছুঁড়তে বেরিয়ে আসে। যাকে সামনে পায় তাকেই নির্বিচারে গুলি করতে থাকে। সবাই যখন গুলি থেকে বাঁচতে পালাচ্ছিলো তখনও মিরাজ গুলি থেকে বাঁচার চেষ্টাও করেনি। তখনও তিনি ফ্লাইওভারের পিলারের নিচে। এসময় পুলিশ সদস্যরা রাস্তা পার হয়ে এসে গুলি চালায়। গুলি সরাসরি মিরাজের বুকের বামপাশে এসে লাগে। মিরাজ সাথে-সাথেই লুটিয়ে পড়েন ফ্লাইওভারের নিচে।

পুলিশ একসাথে ১০-১২ জন মানুষকে এখানে নির্বিচারে হত্যা করে। যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচে একসাথে পড়ে থাকা ১০-১২ জনের লাশের ভিডিওটা ভাইরাল হয় পরে। এইসময় শহীদ মিরাজের বাবা একটু পেছনের কাজলার জিরো পয়েন্টে আন্দোলনে আহত-নিহত অনেককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তখনও তিনি জানতেন না একটু সামনে যাত্রাবাড়ী থানার ফ্লাইওভারের নিচে ওনার নিজের সন্তানেরই গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে আছে। অনেকক্ষণ মিরাজের সাথে ফোনে যোগাযোগ করতে না পারায় সবাই টেনশানে পড়ে যান। একজন রিকশাচালক মামা শহীদ মিরাজকে উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যান।

রিকশাচালক মামা ফোন করে জানান যে মিরাজ মারা গেছেন। মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে সব বন্ধুরা মিলে এম্বুলেন্সে করে মিরাজের লাশ নিয়ে আসেন। ইশার পর জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় পাঁচ হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে। জানাজা শেষে মিরাজকে ডেমরার ডগাইর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। শহীদ মিরাজের বাবা-মা বলেন, মিরাজের মৃত্যুর জন্য একমাত্র পুলিশ দায়ী। নিজের ছেলের খুনী গণহত্যাকারীদের বিচার দেখতে চান দ্রুত তাঁরা।

পুরো নাম: মিরাজ হোসেন

পিতা: মো আব্দুর রব

মাতা:মমতাজ বেগম

পেশা: স্টুডেন্ট, সোহরোওয়ার্দী কলেজ এবং ফ্রিল্যান্সার ছিলেন।

জন্মসাল: ৩ই মার্চ ১৯৯৫

শহীদ হওয়ার দিন: ৫ই আগস্ট ২০২৪, সোমবার, দুপুর ২টা ৪০।

শহীদ হওয়ার স্থান: যাত্রাবাড়ী।

যাদের গুলিতে শহীদ: পুলিশের গুলি বুকের বাম পাশে লেগে সাথে-সাথেই মৃত্যুবরণ করেন ।

রিফাত

আরো পড়ুন  

×