ছবি: সংগৃহীত
বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের সঙ্গে জিপিএস প্রযুক্তি অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। গাড়ি চালানো, মোবাইলে লোকেশন ট্র্যাকিং কিংবা সামরিক কর্মকাণ্ড—সব ক্ষেত্রেই নির্ভরতা রয়েছে স্যাটেলাইট ভিত্তিক জিপিএসের ওপর। সঠিক অবস্থান, দিকনির্দেশনা ও সময় নির্ধারণে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, আপনি কি জানেন, জিপিএস কখনো কখনো অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে? বিশেষ করে যুদ্ধের সময়ে সহজেই জিপিএস সিগন্যাল জ্যাম বা ধ্বংস করা সম্ভব।
এই সমস্যার সমাধানে বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরে বিকল্প পথ খুঁজছিলেন। এক পর্যায়ে তারা পেয়েছিলেন পালসার নেভিগেশন সিস্টেম, যা স্যাটেলাইটের বিকল্প মহাকাশভিত্তিক একটি আত্মনির্ভর প্রযুক্তি। এটি স্যাটেলাইট ছাড়া নির্ভুল ও নিরাপদ অবস্থান ও দিকনির্দেশনা দেয়। দর্শক, এই আধুনিক প্রযুক্তির সঠিক বর্ণনা প্রায় ১৪০০ বছর আগে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে। আয়াতে এসেছে:
“তিনি পথ নির্ণয়ক বহু চিহ্ন সৃষ্টি করেছেন এবং তারকা দ্বারাও মানুষ পথের নির্দেশ পায়।”
বিভিন্ন তাফসীরের ব্যাখ্যা মতে, তারকা সৃষ্টির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো রাস্তার পথ চিনে নেওয়া। তবে, এই তারকাগুলো দিয়ে ভাগ্য বা জগতের নিয়ন্ত্রণের কোনো হিসাব-নিকাশ কুফরি। কাতাদা রহমতুল্লাহ আলাইহি বলেছেন, আল্লাহ তিন কারণে তারকা সৃষ্টি করেছেন: আকাশের সৌন্দর্য, শয়তান বিতরণ, এবং পথ নির্দেশের আলামত হিসেবে। তাই, তারকাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার ভুল ও অকারণ প্রচেষ্টা।
তবে, প্রশ্ন থেকে যায়—কোন তারকার সাহায্যে আমরা দিকনির্দেশনা পেতে পারি এবং এটি কীভাবে কাজ করে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, পালসারি স্টার নামে এক ধরনের নিউট্রন তারকা রয়েছে। এটি একসময় মহাবিস্ফোরিত তারকার অবশিষ্টাংশ যা দ্রুত ঘুরে নির্দিষ্ট সময় পরপর একঘণ্টা মতো সুনির্দিষ্ট সিগন্যাল বা বিকিরণ পাঠায়। এই বিকিরণ ধরতে পারলে মহাবিশ্বে নিজের সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা যায়। নাসা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরীক্ষামূলক মহাকাশযানে ১০ কিলোমিটার নির্ভুল অবস্থান নির্ধারণে সফল হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভবিষ্যতে মহাকাশযানগুলো জিপিএসের পরিবর্তে পালসার সিগন্যালের ওপর নির্ভর করবে, কারণ এটি ধ্বংস বা জ্যাম করা যায় না এবং সারাজীবন ফ্রি সিগন্যাল প্রদান করে। সূরা নাহলের আয়াত নাযিলের পরও অনেক অবিশ্বাসী তারকা দিয়ে পথ নির্ণয়কে অগ্রহণযোগ্য মনে করেছিল, কারণ তারা তারকাদের সরে যাওয়ার কথা উল্লেখ করত। কিন্তু আজ বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে পালসার নামের এই বিশেষ তারকাগুলো নির্ভরযোগ্য সিগন্যাল দিয়ে মানুষের অবস্থান জানায়।
গবেষকরা ভবিষ্যতে পালসার নেভিগেশন সিস্টেমকে আধুনিক জিপিএসের বিকল্প হিসেবে গণ্য করছেন এবং এর ব্যবহার মহাকাশ, সামরিক ক্ষেত্র, সাবমেরিন ও ভূগর্ভস্থ যানবাহনে ব্যাপক করার সুপারিশ করছেন। কারণ যেখানে স্যাটেলাইট ভিত্তিক জিপিএস অকার্যকর, সেখানে পালসার নেভিগেশন প্রযুক্তি নির্ভুল ও কার্যকর। এজন্য একে শুধু আধুনিক জিপিএস নয়, বরং “আসমানি জিপিএস” বলা হয়।
ফরিদ
