
ছবি: সংগৃহীত
পানি জীবনের জন্য অপরিহার্য। এটি আমাদের শরীরের খাবার হজম, বিভিন্ন বিপাকীয় কাজ এবং সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পর্যাপ্ত পানি পান না করলে যেমন ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতাজনিত নানা রোগ দেখা দিতে পারে, তেমনি অনেকেই জানেন না যে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পানি পান করলেও শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
প্রতিদিন কতটুকু পানি পান করা উচিত?
ব্যক্তিভেদে পানির চাহিদা বিভিন্ন কারণে ভিন্ন হতে পারে। তবে, সাধারণভাবে বলা যায়, পূর্ণবয়স্ক নারী-পুরুষের প্রতিদিন ২-৩ লিটার পানি পান করা উচিত। দিনে কতটুকু পানি পান করতে হবে, তা মূলত আবহাওয়া, শারীরিক শ্রম এবং ওজনের ওপর নির্ভর করে।
- আবহাওয়া: গ্রীষ্মকালে গরম আবহাওয়ার কারণে শরীরের পানির চাহিদা বেড়ে যায়। আবার শীতকালে পানি পানের ইচ্ছা তুলনামূলকভাবে কম হয়। তবে, সব সময় শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পান করা ভালো।
- শারীরিক শ্রম: যারা বেশি পরিশ্রম করেন বা কায়িক শ্রমের সাথে জড়িত, তাদের বেশি পানি পান করতে হবে, কারণ ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়।
ওজন অনুযায়ী পানিপানের নিয়ম:
নিজের ওজনের ওপরই মূলত নির্ভর করবে আপনার প্রতিদিন কতটা পানি পান করা প্রয়োজন। অর্থাৎ, যদি আপনার ওজন ৪৫ কেজি হয়, তাহলে যতটুকু পানি খাওয়া প্রয়োজন, ওজন ৯০ কেজি হলে পাল্টে যাবে সেই পরিমাণ। শরীফা আক্তার শাম্মি জানান, প্রতিদিন কতটুকু পানি পান প্রয়োজন তা জানতে হলে নিজের ওজনকে ২ দিয়ে ভাগ করে পানির পরিমাণ বের করা যায়।
উদাহরণস্বরূপ: আপনার ওজন যদি ১৭০ পাউন্ড (প্রায় ৭৭ কিলোগ্রাম) হয়, তাহলে আপনাকে প্রতিদিন ১৭০ / ২ = ৮৫ আউন্স (প্রায় ২.৫ লিটার) পানি পান করতে হবে।
অতিরিক্ত পানি পানে কী ক্ষতি হতে পারে?
পানি যতটুকু খাওয়া প্রয়োজন ততটুকু অবশ্যই পান করবেন। তবে, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পানি পান করার ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কেও সচেতন থাকা জরুরি:
- ক্লান্তি ও মাথাব্যথা: অতিরিক্ত পানি পান করলে শরীরে ক্লান্তি এবং মাথাব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
- ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা (হাইপোন্যাট্রিমিয়া): প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি পান করলে রক্তে ইলেক্ট্রোলাইটগুলো (বিশেষ করে সোডিয়াম) পাতলা হয়ে যায়। শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে কমে গেলে এই অবস্থাকে হাইপোন্যাট্রিমিয়া বলা হয়, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর ফলে দুর্বলতা, খিঁচুনি এবং এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো গুরুতর সমস্যা তৈরি হতে পারে।
- ওজন বৃদ্ধি: অনেক সময় শরীর অতিরিক্ত পানি ধরে রাখে, যা সাময়িকভাবে ওজন বাড়াতে পারে।
- কিডনির উপর চাপ: একটি সুস্থ কিডনি প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ প্রায় ১ লিটার (এক কোয়ার্ট) তরল পদার্থ শরীর থেকে ত্যাগ করতে পারে। এর বেশি পানি পান করলে, সেই অতিরিক্ত পানি আপনার দেহে জমা হতে পারে, যা হাইপোন্যাট্রিমিয়া এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
মনে রাখবেন, সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত পানি পান করা যেমন জরুরি, তেমনি অতিরিক্ত পানি পান করা থেকেও বিরত থাকা উচিত। শরীরের চাহিদা বুঝে পরিমিত পরিমাণে পানি পান করাই সুস্থ থাকার মূল চাবিকাঠি।
সাব্বির