
ছবি: প্রতীকী
খতিয়ান রয়েছে, জমি দখলেও আছেন, কিন্তু তারপরও নামজারি হচ্ছে না—এমন ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেক ভুক্তভোগী। এই সমস্যার সম্ভাব্য কারণ ও সমাধান নিয়ে সম্প্রতি একটি ভিডিওতে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন আইনজীবী রেজাউল ইসলাম খান।
তিনি জানান, অনেক সময় দেখা যায়, জমির সিএস, এসএ, আরএস খতিয়ান ঠিকঠাক রয়েছে এবং জমি ভোগদখলেও আছেন মালিক। কিন্তু তবুও নামজারি আবেদনের পর সেটি খারিজ, বাতিল বা স্থগিত হয়ে যায়। এই অবস্থায় প্রথম করণীয় হলো, সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড (ভূমি সহকারী কমিশনার) কার্যালয়ে গিয়ে এর কারণ সম্পর্কে ব্যাখ্যা চাওয়া।
রেজাউল ইসলাম বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট জমিটি ‘খাস খতিয়ানে’ বা সরকারের ‘ভেস্টেড প্রপার্টি (ভিপি)’ তালিকায় চলে গেছে। ভিপি সম্পত্তি হলো এমন জমি, যার মূল মালিক ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৬৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছেড়ে ভারতে চলে গেছেন এবং সম্পত্তি এখানেই ফেলে গেছেন। সরকারের ১৯৫০ সালের বাস্তব সম্পত্তি আইনের আওতায় এই জমিগুলো রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ‘অর্পিত সম্পত্তি’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
উদাহরণ দিয়ে আইনজীবী বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি তার সন্তানসহ ভারতে চলে যান, এবং অন্য সন্তান বাংলাদেশে থেকে যান ও বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি ভোগদখলে রাখেন, তবুও সেটি ভিপি সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হতে পারে—যেহেতু মূল মালিক (বাবা) ভারতে চলে গেছেন। যদি সেই সম্পত্তি লিখিতভাবে বা হেবা/দান দলিলের মাধ্যমে সন্তানের নামে দিয়ে না যান, তাহলে তা সম্পূর্ণটাই রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে।
তবে সরকার এ বিষয়ে একটি পরিপত্র জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, যদি কোনো ভিপি সম্পত্তির মধ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন অংশ থাকে, তবে সেটিকে সরজমিনে নিরূপণ করে ব্যক্তির অংশটুকু আলাদা করে দ্রুত নামজারি দিতে হবে। এসিল্যান্ডকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনাও রয়েছে।
আইনজীবী আরও বলেন, যদি কেউ মনে করেন তার জমি ভুলবশত ভিপি তালিকায় চলে গেছে এবং তিনি বা তার পূর্বপুরুষরা ভারতে যাননি, তাহলে বিজ্ঞ দেওয়ানী আদালতে মামলা করে সেই ভুল সংশোধন করতে হবে। আবার যদি সম্পত্তির মালিক সত্যিই ভারতে গেছেন কিন্তু উত্তরসূরি হিসেবে কারও হিস্যাপ্রাপ্ত অংশ থাকে, তবে তা আদালতের মাধ্যমে নির্ধারণ করে নিতে হবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, খাস খতিয়ান বা ভিপি খতিয়ান থেকে সম্পত্তি ফেরত আনতে হলে প্রমাণসহ সঠিক প্রক্রিয়ায় মামলা করতে হবে। কেবল তাত্ত্বিক দখল বা খতিয়ান থাকা যথেষ্ট নয়। আদালতের রায় অনুযায়ী নামজারি করা যাবে।
আইনজীবী রেজাউল ইসলাম ভিডিও বার্তায় বলেন, “আপনারা ভিডিও দেখে নিজের কাগজপত্র যাচাই করুন, বুঝুন কেন নামজারি হচ্ছে না। আইন অনুযায়ী প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে এবং আদালতের শরণাপন্ন হলে ন্যায়বিচার পাওয়া সম্ভব।”
এ বিষয়ে সরকার ও আদালতের নির্দেশনা সম্পর্কে ভালোভাবে জানার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি, যাতে ভিপি সম্পত্তি সংক্রান্ত জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=m0mu7bslVwg
রাকিব