ছবি: সংগৃহীত।
একটি মামলা প্রমাণ করতে ঠিক কতজন সাক্ষী লাগবে—এই প্রশ্নটি প্রায়ই বিচারপ্রার্থীদের মনে দেখা দেয়। কেউ ভাবেন বেশি সাক্ষী মানেই মামলা জেতার সম্ভাবনা বেশি, আবার কেউ মনে করেন, অল্প সাক্ষী থাকলেও সত্য ঘটনা তুলে ধরা গেলেই যথেষ্ট। বিষয়টি স্পষ্ট করেছে সাক্ষ্য আইন, বিশেষ করে সাক্ষ্য আইনের ১৩৪ ধারা, যেখানে বলা হয়েছে: "সাক্ষীর সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়"। অর্থাৎ, একটি মামলা প্রমাণ করতে একটি সাক্ষ্যই যথেষ্ট হতে পারে, যদি তা নির্ভরযোগ্য ও প্রাসঙ্গিক হয়।
আইনজীবীরা বলছেন, সাক্ষীর সংখ্যা নয়, বরং সাক্ষীর সত্যতা, পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এবং আদালতে বক্তব্যে অটল থাকার ক্ষমতাই আসল। একজন সাক্ষী যদি মামলার মূল ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হন এবং আদালতের কঠিন জেরার মুখেও সত্য কথা থেকে না সরেন, তবে সেই একজনই পুরো মামলার রায় ঘুরিয়ে দিতে পারেন।
একজন আইন বিশেষজ্ঞ জানান, অনেক মামলায় দেখা গেছে—একজন মাত্র সাক্ষী দিয়েই বাদী তার দাবির স্বপক্ষে রায় পেয়েছেন। আবার কখনো অনেক সাক্ষী উপস্থাপন করেও বাদী পক্ষ মামলা হারিয়েছেন, কারণ তাদের সাক্ষ্য ছিল অসামঞ্জস্যপূর্ণ বা বিভ্রান্তিকর।
একটি বাস্তব উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “একটি জমি সংক্রান্ত মামলায় এক ‘নামাজি’ লোককে সাক্ষী করা হয় যিনি এলাকাবাসীর কাছে বিশ্বস্ত। কিন্তু জেরা চলাকালীন তিনি এমন কিছু সত্য কথা বলেন যা মামলার বাদীর অনুকূলে যায়নি। কারণ, বাদী পক্ষ তাকে যথাযথভাবে প্রস্তুত করেনি। ফলে মামলা দুর্বল হয়ে পড়ে।”
আইন বিশ্লেষকদের মতে, শুধু বিশ্বস্ত বা ঘনিষ্ঠ লোকজনকে সাক্ষী হিসেবে আদালতে নিয়ে আসা যথেষ্ট নয়। সাক্ষীকে মামলার বিষয়বস্তু সম্পর্কে ভালোভাবে জানাতে হয় এবং এমন কাউকেই বেছে নিতে হয় যিনি কৌশলী জেরা সহ্য করে সত্য কথায় অটল থাকতে পারেন।
একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, “আপনার আইনজীবী যতই বলুক—দুই তিনজন সাক্ষী নিয়ে আসুন—আপনাকে বুঝতে হবে কে সত্যিকার অর্থে সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, এবং কে আদালতে গিয়ে সত্য কথা বলার মানসিক দৃঢ়তা রাখে। নইলে সাক্ষী যেমন দুর্বল হবে, তেমন আপনার মামলাও দুর্বল হয়ে পড়বে।”
তাই আদালতে মামলার সাফল্য নির্ভর করে গুণগত সাক্ষ্যদানে, সংখ্যায় নয়। সত্যজ্ঞানসম্পন্ন, সাহসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সাক্ষীই যে কোনো পক্ষের জন্য বড় সম্পদ হয়ে উঠতে পারেন।
মিরাজ খান
