ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কুয়াকাটায় ক্যামেরাম্যানদের জিম্মিদারি বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, উত্তপ্ত স্টুডিও পট্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ০১:৪১, ৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ০১:৪২, ৪ জুন ২০২৫

কুয়াকাটায় ক্যামেরাম্যানদের জিম্মিদারি বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, উত্তপ্ত স্টুডিও পট্টি

কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের স্বস্তিদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে এবং ছবি তুলে জিম্মি করার অভিযোগে স্টুডিও সিন্ডিকেট ভাঙতে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেছে। মঙ্গলবার (৩ জুন) শেষ বিকেলে এই অভিযান চালান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ ইয়াসীন সাদেক। তাকে সহায়তা করেন সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা।

অভিযানে কুয়াকাটার সৈকতের পাশে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক স্টুডিওগুলো তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসব স্টুডিও থেকে ক্যামেরা, প্রিন্টার, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ সময় কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

অভিযানের প্রতিবাদে সন্ধ্যার পর স্টুডিও মালিক, ক্যামেরাম্যান ও কর্মচারীরা কুয়াকাটা চৌরাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল করেন। তারা ঝাড়ু হাতে নিয়ে ইউএনওর অপসারণ দাবি করেন এবং ক্ষতিপূরণসহ জব্দ করা মালামাল ফেরতের দাবি জানান। বক্তৃতা দেন কাওসার হাওলাদার, দোজাহান শেখ, সোহেল, ওসমান, ফিরোজ প্রমুখ।

এ বিষয়ে কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও ইউএনও মো. রবিউল ইসলাম বলেন, “অনেক পর্যটকের অভিযোগের ভিত্তিতে অনেক আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল স্টুডিওগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। বিচ এলাকায় একটি সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে যারা পর্যটকদের জিম্মি করে টাকা আদায় করছে। এখন থেকে প্রত্যেক ক্যামেরাম্যান বিচে স্বাধীনভাবে ছবি তুলতে পারবে এবং ক্যাবল বা মেমোরির মাধ্যমে পর্যটকদের কাছে তা সরবরাহ করবে। স্টুডিও নামক মধ্যস্বত্বভোগীদের আর কোনো ভূমিকা থাকবে না।”

তিনি আরও বলেন, “স্টুডিও পট্টি হয়ে উঠেছে পর্যটক হয়রানির কেন্দ্রবিন্দু। পর্যটকদের স্বস্তি ফেরাতে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এই অভিযান চালানো হয়েছে এবং পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অভিযোগ রয়েছে, সৈকতে নামার সঙ্গে সঙ্গে একাধিক ক্যামেরাম্যান ঘিরে ধরে পর্যটকদের ছবি তোলার জন্য চাপ দেয়। কেউ ছবি তুললে তাকে জোর করে স্টুডিওতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সব ছবি নিতে বাধ্য করা হয়। নির্ধারিত অঙ্কের চেয়েও বেশি টাকা আদায় করা হয়। এমনকি, কেউ কেউ গোপনে গোসলরত অবস্থায়ও ছবি তোলে, যা পর্যটকদের জন্য দারুণ বিব্রতকর।

সিদ্ধান্ত ছিল, ক্যামেরাম্যানরা সৈকতের উপরের সড়কে নির্ধারিত স্থানে অবস্থান করবেন এবং পর্যটক চাইলে তবেই ছবি তুলবেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এসব নিয়ম মানা হচ্ছিল না। এই অবস্থায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ঘটনার পক্ষে-বিপক্ষে চলছে নানা বিশ্লেষণ। তবে অধিকাংশ মানুষই প্রশাসনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং কুয়াকাটার পরিবেশ রক্ষায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন।

উল্লেখ্য, গত তিন মাসে কুয়াকাটায় পর্যটকের আগমন উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে, যার অন্যতম কারণ হিসেবে পর্যটকদের হয়রানি, জিম্মিদারি এবং অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠে এসেছে।

মিমিয়া

×