
ছবিঃ সংগৃহীত
পাবনা জেলার অধিকাংশ এলাকায় এক সময় রাজা, জমিদারদের বসবাস ছিলো। এসব জমিদাররা বসবাসের জন্য বিশাল বিশাল অট্টালিকা তৈরি করে। সে সকল জমিদার বাড়ি গুলো এখন ধ্বংসস্ত পুরাকীর্তি। জেলার কয়েকটি জমিদার বাড়ির মধ্যে শিতলাই জমিদার বাড়িটি ঐতিহাসিক।
চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের শীতলাই গ্রামে অবস্থিত শত বছরের পুরাতন মৈত্র জমিদার বংশের শেষ স্মৃতি চিহ্ন। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ভেঙে যাচ্ছে, লতাপাতায় ঘিরে ধরেছে এই বাড়িটিকে। বর্তমানে জমিদার বাড়ির শেষ চিহ্নটুকু ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। জানা যায়,জমিদার যোগেন্দ্রনাথ মৈত্রেয় প্রায় ১৯০০ শতকের প্রথম দিকে এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন। তবে এই জমিদার বংশের মূল হিসেবে যাকে বিবেচনা করা হয় তিনি জমিদার চাঁদীপ্রসাদ মৈত্রেয়। তারই বংশ পরিক্রমায় যোগেন্দ্রনাথ মৈত্রেয় তার জমিদারি বংশের পূর্ববর্তী জমিদারি এলাকা সিরাজগঞ্জ জেলার শরৎনগর ছেড়ে পাবনা জেলার শিতলাই নামক এলাকার জমিদারি স্থানান্তর করেন। এই জমিদার বাড়িটি তারই নির্মাণ করা।
সুনসান নিরবতার এই বাড়িটিকে ঘিরে রয়েছে প্রায় দুইশ বছরের ইতিহাস। জমিদার বাড়িটি ইন্দো-ইউরোপীয়ান স্থাপত্যশৈলিতে নির্মাণ করা হয়েছে। এটি দুই তলা বিশিষ্ট বাড়ি। জমিদার বাড়ির পাশে রয়েছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় একটি বিশালাকার আয়তনের দীঘি। বাড়িটিতে মোট ৩০টি কক্ষ রয়েছে। ভগ্নদশায় নিপতিত বাড়িটির দেয়ালের ইট চুন সুড়কি খসে পরছে। বুকে অসংখ্য ফাঁটল ধারণ করেও বাড়িটি তার প্রাচীনত্ব ও আভিজাত্যের ছাপ বহন করছে।
শীতলাই মৈত্র জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা লোকনাথ মৈত্র রাজশাহীতে মোক্তারী করতেন। সেই সময় তার দানে রাজশাহীতে লোকনাথ হাই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। লোকনাথ মৈত্র মহাশয় কয়েকটি জমিদারি (লাটবন্দী) ক্রয় করেন। তাঁর একমাত্র কন্যা রাজরাজেশ্বরী দেবীর বিবাহের কয়েকদিন পরই মৃত্যু হওয়ায় তিনি অত্যন্ত আঘাত পান। কন্যার স্মৃতি রক্ষার্থে কাশীধামে রাজরাজেশ্বরী নামে একটি বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। লোকনাথ মৈত্র অপুত্রক অবস্থায় পরলোকগমন করলে তার পত্নি (স্ত্রী) সোনামণী দেবী নাটোর মহকুমার বলদখান গ্রামের চন্দ্রনাথ নামক এক গরীব সন্তান পোষ্য নেন। তিনি শরৎসুন্দরী নামের এক কন্যা রেখে অপুত্রক অবস্থায় পরলোকগমন করেন।
চন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর তার সহধর্মিনী জ্ঞানদা সুন্দরী দেবী পাবনা জেলার বাবুলীদহ গ্রামের সুরেন্দ্রনাথকে পোষ্য গ্রহণ করেন। দেওয়ান কালীপ্রসন্ন বিশ্বাস জমিদারি দেখাশুনা করতেন। সরলা দেবী চলনবিলের শীতলাই গ্রামে বসবাস করতে অনিহা প্রকাশ করায় যোগেন্দ্রনাথ মৈত্র তার জন্য পাবনায় শীতলাই বাড়ি তৈরী করেন। কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে শিতলাই জমিদার বাড়ি।
সংস্কার কাজ করা হলে চাটমোহরের এ জমিদার বাড়িটি হতে পারে একটি দর্শনীয় স্থান। চাটমোহর বাসীর দীর্ঘদিনের দাবি জমিদার বাড়িটি অবৈধ দখলমুক্ত করে চলনবিল কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা।
ইমরান