ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কোরবানির ঈদে মাংস: কতটুকু খাবেন, কীভাবে খাবেন?

প্রকাশিত: ১৯:৫৯, ৫ জুন ২০২৫

কোরবানির ঈদে মাংস: কতটুকু খাবেন, কীভাবে খাবেন?

ছবি: সংগৃহীত

কোরবানির ঈদ মানেই উৎসবের আমেজ, আর এই উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো মাংসের নানা রকম আয়োজন। সুস্বাদু বিরিয়ানি থেকে শুরু করে মাংসের রোস্ট – সব ঘরেই থাকে ভুরিভোজের আয়োজন। তবে এই আনন্দের সময়ে অনেকেই মাংস খাওয়ার পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন থাকেন না। ফলে অতিরিক্ত লাল মাংস খেয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন, যা ঈদের আনন্দকে ম্লান করে দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, লাল মাংস অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। তবে সঠিক পরিমাণ অনুযায়ী খেলে এবং কিছু সতর্কতা মেনে চললে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা এড়ানো সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, প্রক্রিয়াজাত মাংস ও লাল মাংস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, তাই মাংস পরিমিত পরিমাণে খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মাংসের উপকারিতা: পুষ্টির এক দারুণ উৎস

মাংস যে প্রোটিনের একটি দুর্দান্ত উৎস, তা সবারই জানা। প্রোটিন দেহের কোষ গঠন ও মেরামতে সহায়তা করে। এছাড়াও, লাল মাংস (যেমন ভেড়া, গরুর মাংস, খাসির মাংস) আয়রনের একটি চমৎকার উৎস, যা রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করে এবং শরীরের পেশিগুলোতে অক্সিজেন প্রবাহে সহায়তা করে।

সপ্তাহে একবার বা দুইবার লাল মাংস আপনার দৈনন্দিন ডায়েটে রাখা যেতে পারে, এতে শরীরের কোনো ক্ষতি হবে না। মাংসে থাকা উচ্চ প্রোটিন ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, যার ফলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে এবং অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা যায়। গরু ও খাসির মাংসে আরও থাকে:

  • জিঙ্ক: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • ভিটামিন বি১২: খাদ্য থেকে শক্তি যোগান দেয় এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতায় সহায়তা করে।
  • সেলেনিয়াম: শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
  • ফসফরাস: দাঁত ও হাড়ের শক্তি বাড়ায়।
  • নায়াসিন (ভিটামিন বি৩) ও ভিটামিন বি৬: শরীরের বিভিন্ন বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • রিবোফ্লেবিন (ভিটামিন বি২): শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে।

কতটুকু মাংস খাওয়া নিরাপদ?

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন প্রায় ২১ গ্রাম লাল মাংস খান, তাদের তুলনায় যারা দিনে প্রায় ৭৬ গ্রাম লাল এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস খান, তাদের অন্ত্রের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) এর নির্দেশনা অনুযায়ী, যারা নিয়মিত ৯০ গ্রামের বেশি লাল বা প্রক্রিয়াজাত মাংস খায়, তাদের কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশেই বেড়ে যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দৈনিক গরুর মাংস খাওয়ার নিরাপদ মাত্রা হলো ৩ আউন্স বা প্রায় ৮৫ গ্রাম। আনুমানিকভাবে এটি একটি কম্পিউটারের মাউস বা একটি তাসের বান্ডিলের সমান টুকরো হতে পারে। এই পরিমাণ মাংস খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক কমে আসে।

চর্বিবিহীন মাংসের গুরুত্ব:

পুষ্টিবিদরা চর্বি ছাড়া মাংস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অবাক করা তথ্য হলো, গরুর শরীরের দুটি অংশ আছে যেখানে পাবেন চর্বি ছাড়া মাংস এবং এই অংশগুলোতে চর্বির পরিমাণ চামড়া ছড়ানো মুরগির থানের মাংসের চেয়েও কম। এই দুটি অংশ হলো 'রাউন্ড' (Round) এবং 'সিরলইন' (Sirloin)

এই অংশগুলোর মাংসে চর্বির পরিমাণ থাকে সর্বনিম্ন ৪.২ গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ৮.২ গ্রাম। যেখানে মুরগির থানের মাংসে অভ্যন্তরীণ চর্বির পরিমাণ থাকে ৯.২ গ্রাম। তাই আপনি গরু, খাসি বা মুরগি যে মাংসই খান না কেন, তার থেকে দৃশ্যমান চর্বি আলাদা করে সলিড মাংস খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এতে আপনি সুস্থ থাকতে পারবেন।

পরিশেষে: সুস্থ থাকার কৌশল

বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন মাংস খাওয়ার পরামর্শ কখনোই দেন না। পুষ্টিবিদদের মতে, সপ্তাহে একবার বা দুইবার লাল মাংস ডায়েটে রাখা উচিত। পাশাপাশি, শরীরে প্রোটিনের অভাব পূরণ করতে মাংসের বিকল্প হিসেবে ডায়েটে রাখতে পারেন: মসুর, ছোলা, কিডনি বিন, মটর, মাখন, মটরশুটি, বেকড বিনস ইত্যাদি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রক্রিয়াজাত মাংস সম্পূর্ণরূপে খাওয়া বাদ দেওয়া। এই নিয়মগুলো মেনে চললে শরীর থাকবে সুস্থ এবং ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন নিরোগ দেহে।

সাব্বির

×