
গর্ভাবস্থা মানেই কেবল খুশি নয়, এই সময়েও আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে মানসিক অবসাদ। অবহেলা করলে বিপদ হতে পারে মা ও সন্তানের জন্য সতর্ক করলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
সাধারণভাবে গর্ভাবস্থাকে বলা হয় জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় সময়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই সময় মানসিক স্বাস্থ্যের বড়সড় চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে। অনেক সময় গর্ভবতী মায়েরা একা একা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন, যা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে সন্তান ও মায়ের উভয়ের উপর।
গর্ভাবস্থার মানসিক অবসাদ মানে কী?
এই অবসাদকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলা হয় পেরিনেটাল ডিপ্রেশন, যা গর্ভাবস্থা চলাকালীন (অ্যান্টিনেটাল ডিপ্রেশন) বা সন্তান জন্মের পর (পোস্টনেটাল ডিপ্রেশন) যেকোনো সময়েই দেখা দিতে পারে।
ডা. অপর্ণা ঝা, ভারতীয় নারী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ, জানান—
“এই সমস্যায় ভোগেন প্রায় ৫% থেকে ২০% গর্ভবতী নারী। কিন্তু আমাদের সমাজে ‘মা’ হওয়ার মানে যেন সবসময় খুশি থাকা, তাই অনেকেই মানসিক সমস্যার কথা বলতে লজ্জা পান, কিংবা বুঝতেই পারেন না কী হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, “হরমোনের পরিবর্তন, পারিবারিক সহায়তার অভাব, আর্থিক টানাপোড়েন, আগের মানসিক রোগের ইতিহাস এবং গর্ভাবস্থায় জটিলতা সবকিছু মিলে তৈরি হতে পারে এই মানসিক চাপ।”
লক্ষণগুলো কীভাবে বুঝবেন?
গর্ভাবস্থায় অবসাদের কিছু সাধারণ লক্ষণ:
-
দীর্ঘ সময় ধরে দুঃখবোধ বা খালি খালি মনে হওয়া
-
অতিরিক্ত ক্লান্তি বা এনার্জির ঘাটতি
-
ঘুমের সমস্যা—কম বা অতিরিক্ত ঘুম
-
খাওয়াদাওয়ার অভ্যাসে হঠাৎ পরিবর্তন
-
যেসব কাজে আগ্রহ ছিল, সেগুলোর প্রতি আগ্রহ হারানো
-
সন্তানের সঙ্গে সম্পর্কহীনতা বা নিজেকে ‘খারাপ মা’ মনে হওয়া
-
মনোযোগের অভাব, সিদ্ধান্ত নিতে কষ্ট
-
আত্মহানির চিন্তা
এই লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে বা হঠাৎ করেও শুরু হতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে মাসের পর মাস ভোগাতে পারে।
চিকিৎসা ও করণীয়
ডা. অপর্ণা ঝা বলেন, “গর্ভকালীন রুটিন চেকআপের সময় কয়েকটি প্রশ্ন করেই এই অবসাদ চিহ্নিত করা সম্ভব। চিকিৎসা শুরু করলেই উপশম পাওয়া যায়।”
চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের মাত্রার ওপর। হালকা ও মাঝারি অবসাদের ক্ষেত্রে থেরাপি বা কাউন্সেলিং খুব উপকারী।
CBT বা কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি মন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। গুরুতর ক্ষেত্রে চিকিৎসক বিশেষ নিরাপদ অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন, যা গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালীন নিরাপদ।
পরিবার কীভাবে সহায়তা করতে পারে?
পরিবারের ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের আচরণে পরিবর্তন বুঝতে পারলে পাশে দাঁড়ান, কথা বলুন, শুনুন। প্রতিদিনের ছোটখাটো কাজে সাহায্য করুন—এইসবই মানসিক চাপ কমাতে কার্যকর।
শারীরিক যত্ন যেমন গর্ভাবস্থায় অপরিহার্য, ঠিক তেমনি মানসিক যত্নও জরুরি।
গর্ভাবস্থার মানসিক অবসাদ কোনো দুর্বলতা নয়, বরং চিকিৎসাযোগ্য একটি মানসিক অবস্থা। সময়মতো সাহায্য চাইলে একজন মা সুস্থভাবে সন্তানের জন্ম দিতে পারেন, ও সুস্থ মা মানেই সুস্থ ভবিষ্যৎ।
মিমিয়া