ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শুধু বায়োটিন খেলেই চুল পড়া কমবে? বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৫ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৫:৩৭, ৫ জুন ২০২৫

শুধু বায়োটিন খেলেই চুল পড়া কমবে? বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া আজকাল কঠিন। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এই সমস্যার প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে। আর চুল পড়া কমাতে অনেকেই নিজেদের মতো করে সমাধান খোঁজেন—তেলের ব্যবহারে, দামি প্রসাধনীতে বা সরাসরি বায়োটিন সাপ্লিমেন্ট খেয়ে। কিন্তু সত্যিই কি বায়োটিন খেলেই চুল পড়া বন্ধ হয়?

বিশেষজ্ঞদের মতে, চুল পড়ার একক কোনো কারণ নেই। এটা হতে পারে জেনেটিক, মানসিক চাপের কারণে, কিংবা শরীরে পুষ্টির ঘাটতির কারণে। আর শুধুমাত্র পুষ্টির ঘাটতির কারণেই যদি চুল পড়ে, তাহলে সেক্ষেত্রে বায়োটিন কাজ করতে পারে। কিন্তু জেনেটিক বা হরমোনজনিত কারণে চুল পড়লে বায়োটিন খেলেও কোনো উপকার মিলবে না।

বায়োটিন কী ও কীভাবে কাজ করে?
বায়োটিন হচ্ছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্সের একটি অংশ—বিশেষত ভিটামিন বি৭। এটি শরীরের কোষ, ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বায়োটিন শরীরে চুল গঠনের প্রোটিন ‘কেরাটিন’-এর উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। কিন্তু এটি তখনই কার্যকর যখন শরীরে সত্যিই বায়োটিনের ঘাটতি থাকে।

চিকিৎসকদের মতে, শরীরে বায়োটিনের ঘাটতির লক্ষণ দেখা যায় খুব কম মানুষের মধ্যে। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বায়োটিন সাপ্লিমেন্ট খাওয়া হচ্ছে অনুমানভিত্তিক—যা কার্যকর না-ও হতে পারে।

চুল পড়ার সম্ভাব্য প্রধান কারণগুলো:
১. জেনেটিক বা অ্যান্ড্রোজেনিক অ্যালোপেসিয়া:
এটি সবচেয়ে সাধারণ কারণ। পুরুষদের ক্ষেত্রে টাক পড়া M-আকৃতির হয়, আর নারীদের ক্ষেত্রে মাথার ত্বক ধীরে ধীরে পাতলা হতে থাকে। এ ক্ষেত্রে সমস্যা হয় DHT নামক হরমোনের প্রভাবে, যেটি চুলের ফলিকল দুর্বল করে দেয়।

২. মানসিক চাপ বা ট্রমা:
অস্ত্রোপচার, সন্তান জন্মদান, জ্বর বা বড় মানসিক আঘাতের কারণে শরীরে একটি ধকলের সময় যায়। এতে করে দুই থেকে তিন মাস পর টেলোজেন ইফ্লুভিয়াম নামক চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয়—যেখানে মাথার সব অংশ থেকে একসাথে অনেক চুল পড়ে যায়।

৩. পুষ্টির ঘাটতি:
শরীরে যদি প্রোটিন, আয়রন, বায়োটিন, বা অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব থাকে, তাহলে তা চুলের স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে। এক্ষেত্রেও চুল সমানভাবে পড়ে।

কীভাবে বুঝবেন চুল পড়ার প্রকৃত কারণ?
যদি চুল নির্দিষ্ট একটি এলাকা থেকে পড়ে—যেমন সামনে, মাথার মাঝখান থেকে, বা পাশ থেকে—তাহলে এটি জেনেটিক কারণে হতে পারে। আবার যদি সারা মাথা থেকে সমানভাবে চুল পড়ে, তাহলে তা পুষ্টির ঘাটতি বা মানসিক চাপজনিত সমস্যা হতে পারে।

চুল পড়ার গতি থেকেও অনেকে ধারণা করতে পারেন: যদি ধীরে ধীরে পড়ে, তাহলে তা জেনেটিক; আর হঠাৎ করে দ্রুত পড়তে থাকলে সেটি হতে পারে স্ট্রেস বা ভিটামিনের অভাবজনিত।

অকারণে বায়োটিন খাওয়া কতটা ক্ষতিকর?
যেহেতু অধিকাংশ মানুষের শরীরে প্রকৃত অর্থে বায়োটিনের ঘাটতি থাকে না, তাই অকারণে বায়োটিন খাওয়া শুধুই সময় ও অর্থের অপচয়। অনেকে আবার দীর্ঘদিন উচ্চমাত্রায় বায়োটিন গ্রহণ করেন, যা শরীরে হরমোনাল ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে, এমনকি পরীক্ষার রিপোর্টেও ভুল ফল দেখাতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় যা বললেন একজন ভুক্তভোগী
চুল পড়ার কারণে সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি পরিচিত ক্লিনিক থেকে চুল প্রতিস্থাপন করিয়েছেন একজন তরুণ ইউটিউবার। তিনি জানান, “আমি আগে অনেক রকম তেল, সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করেছি। কিন্তু কোনো কিছুতেই স্থায়ী সমাধান আসেনি। অবশেষে পরীক্ষা করে দেখা গেল আমার চুল পড়া হচ্ছে জেনেটিক কারণে। তখনই সিদ্ধান্ত নেই হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করানোর। এখন ধীরে ধীরে নতুন চুল গজাচ্ছে।”


চুল পড়া একটি স্বাভাবিক সমস্যা—কিন্তু তার সমাধান কখনোই অনুমাননির্ভর হওয়া উচিত নয়। সঠিকভাবে চুল পড়ার ধরন এবং কারণ চিহ্নিত না করে চিকিৎসা শুরু করলে সমস্যার সমাধান তো হবেই না, বরং আরও খারাপ হতে পারে।
তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন—নিজে থেকে কোনো কিছু খাওয়া বা ব্যবহার না করে, একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ বা হেয়ার স্পেশালিস্টের পরামর্শ নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

ফরিদ 

আরো পড়ুন  

×