
ছবি: সংগৃহীত
চাঁদে সফলভাবে অবতরণের দৌড়ে এবার আবারও আলোচনায় জাপানি মহাকাশযান Resilience। পাঁচ মাসের দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে চাঁদের মাটিতে অবতরণের পরিকল্পনা করেছে জাপানভিত্তিক কোম্পানি Ispace। সময় নির্ধারিত হয়েছে বাংলাদেশ সময় রাত ১টা ২৪ মিনিটে।
এই অভিযানে ঝুঁকি যেমন আছে, তেমনি রয়েছে অভিজ্ঞতা অর্জনের বড় সুযোগও—এমনটাই বলছে প্রতিষ্ঠানটি।
এর আগে জানুয়ারি মাসে ফ্লোরিডা থেকে স্পেসএক্সের রকেটে করে দুইটি লুনার ল্যান্ডার পাঠানো হয়। তার একটি—Blue Ghost—মার্চে চাঁদের মাটিতে সফলভাবে নেমে ইতিহাস গড়েছে। আরেকটি, Resilience, এখনও যাত্রাপথেই ছিল। অবশেষে সে পৌঁছেছে গন্তব্যের কাছাকাছি।
ধীরে চলার পেছনে কৌশল
Ispace-এর অর্থপ্রধান জুম্পেই নোজাকি সিএনএন-কে বলেন, ‘এই দীর্ঘ যাত্রা আমাদের অনেক কিছু শেখার সুযোগ দিয়েছে। প্রতিদিনই কিছু না কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে, যা ভবিষ্যতের জন্য কার্যকর শিক্ষা।’
তিনি আরও জানান, ‘লো-এনার্জি ট্রান্সফার’ নামে পরিচিত এই ধীরগতির যাত্রা চাঁদের অভিকর্ষ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কম জ্বালানি খরচে চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছাতে সহায়তা করে।
অতীতের ব্যর্থতা ও বর্তমান আশাবাদ
২০২৩ সালের এপ্রিলে Ispace প্রথমবার চাঁদে মহাকাশযান নামানোর চেষ্টা করে, তবে তখন সেটি অবতরণের আগেই ভেঙে পড়ে। এবার তারা বেছে নিয়েছে অপেক্ষাকৃত সমতল এলাকা Mare Frigoris—যার অর্থ ‘Sea of Cold’। এই অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি আরও মসৃণ বলে মনে করা হয়, যা সফল অবতরণের সম্ভাবনা বাড়ায়।
Resilience এই মুহূর্তে বহন করছে তিনটি বৈজ্ঞানিক উপকরণ—
- শৈবালভিত্তিক খাদ্য উৎপাদন পরীক্ষার মডিউল
- গভীর মহাকাশে রেডিয়েশন পর্যবেক্ষণ যন্ত্র
- জলীয় পদার্থ বিশ্লেষণের মাধ্যমে হাইড্রোজেন-অক্সিজেন উৎপাদনের পরীক্ষণ যন্ত্র
এই পরীক্ষা সফল হলে চাঁদের পরিবেশে ভবিষ্যৎ মানব মিশনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি ও খাদ্য উৎপাদনের নতুন দিগন্ত খুলে যেতে পারে।
তবে দীর্ঘ যাত্রা মানেই বাড়তি চ্যালেঞ্জ। রেডিয়েশন ও তাপমাত্রার অস্থিরতার কারণে যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাই Ispace আগামী মিশনে আর এই ধীর পদ্ধতি অনুসরণ করবে না বলে জানিয়েছে।
বাণিজ্যিক দৌড়ে নেতৃত্বে কারা?
চাঁদে সফল অবতরণের তালিকায় এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের কোনও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নেই। এই মুহূর্তে Resilience যদি সঠিকভাবে অবতরণ করে, তাহলে Ispace হয়ে উঠবে প্রথম জাপানি এবং দ্বিতীয় বাণিজ্যিক কোম্পানি যাদের চাঁদের বুকে সফল অবতরণ ঘটেছে।
এর আগে Firefly Aerospace-এর Blue Ghost চাঁদের মাটিতে নেমে সফলতা অর্জন করেছে। অন্যদিকে Intuitive Machines-এর দুটি নভোযান চাঁদে নামলেও দুটোই উল্টে পড়ে যাওয়ায় কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়ে।
NASA-এর Commercial Lunar Payload Services (CLPS) প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে Firefly ও Intuitive Machines কাজ করছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ভবিষ্যতে মানুষকে চাঁদে ফেরত পাঠানোর জন্য রোবোটিক গবেষণাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
চাঁদের মাটিতে অবতরণ সরাসরি সম্প্রচার
Resilience-এর অবতরণের দৃশ্য Ispace সরাসরি সম্প্রচার করবে YouTube ও X (আগে টুইটার)-এ।
চাঁদে পৌঁছানোর জন্য ধীরগতির কৌশল প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণে সাহায্য করলেও, বাজারের প্রতিযোগিতায় এখন দ্রুত পৌঁছানোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলা এই চন্দ্রদৌড়ে কে এগিয়ে থাকে—তা জানতে ঐতিহাসিক মুহূর্তের দিকেই তাকিয়ে আছে বিশ্ব।
সূত্র: সিএনএন।
রাকিব