
ছবি: জনকণ্ঠ
যেখানে আমাদের পার্শ্ববর্তী দুইটি দেশ ভারত এবং পাকিস্তানের জাতীয় খেলা হকি। সেখানে আমাদের দেশে হকি খেলাটা কেনো এতো অবহেলিত ? আপনার মনে কি এমন প্রশ্ন জেগেছে কখনো ? বাংলাদেশে নারীদের একটি জাতীয় হকি দল আছে সেটা হয়তো অনেকেরই জানা। তবে এই দলটি গঠনের পিছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি তা হয়তো অনকেরই আজানা।
ক্রিকেট, ফুটবলের দেশে হকি কে নিরসার্থ ভাবে ভালোবাসা, নারী হকি কে তৃর্ণমূল থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া,সকল প্রতিবন্ধকতাকে পার করে নারী হকি খেলোয়াড়দের পাশে বটবৃক্ষের মতো দাঁড়িয়ে থাকা, নারী হকি কে প্রতিষ্ঠিত করার পিছনে নিজের সমগ্র জীবন পার করে দেওয়া এক নির্ভিক যোদ্ধা মো:তারিকউজ্জামান নান্নু।
বলছিলাম যশোর জেলার গর্ব এবং এক কিংবদন্তি ক্রীড়াবিদ মো:তারিকউজ্জামান নান্নুর কথা। বাংলার প্রতিটি জেলার নারী হকি খেলোয়াড়দের কাছে এক আস্থার নাম, এক বিশ্বাসের নাম তারিকউজ্জামান নান্নু।
তিনি নিজেও ছিলেন একজন হকি খেলোয়াড়। আজাদ স্পোর্টিং ক্লাব এবং মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের জার্সি গায়ে তিনি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ঢাকার হকি মাঠ।১৯৯২ সালে তিনি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ঐ বছরই তার নেতৃত্বে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব শিরোপা অর্জন করে।
তিনি পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করেছেন জেলা ক্রীড়া অফিস থেকে ক্রীড়া পরিদপ্তরের সহকারী পরিচালকের পদ পর্যন্ত। এই দায়িত্ব গুলো পালন করার সময়ই তিনি হাতে তুলে নেন নারী হকি কে তৃণমূল থেকে গড়ে তোলার কাজ।তার প্রচেষ্টায় প্রায় ১৩ টি জেলায় গড়ে ওঠে নারী হকি দল।পরবর্তী তে সে সংখ্যা দাঁড়ায় ২০ টি জেলায়।যেখানে তিনি চাইলেই ফুটবল কিংবা ক্রিকেটের উন্নয়নে অবদান রেখে ইতিহাসে হতে পারতেন চীর স্বরণীয়। সেখানে তিনি কেবল হকির প্রতি ভালোবাসা থেকেই নিজেকে নিয়োজিত করেন হকির উন্নয়নে।
স্কুল ও মাদ্রাসা ক্রীড়া সমিতির গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কালে এবং স্কুল ও মাদ্রাসা ক্রীড়া সমিতির জাতীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে তার প্রস্তাবেই ২০১৬ সাল থেকে স্কুল ও মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ছাত্রীদের হকি অন্তর্ভূক্ত হয়েছে।
হকি কে নিয়ে কেবল তিনিই সপ্ন দেখেন নি বরং সপ্ন দেখিয়েছেন আরো শত শত মেয়েদের।নারী হকির যেকোন কার্যক্রমে তাকে পাওয়া যায় সবার আগে।
২০১৯ সালে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন এবং ক্রীড়া পরিদপ্তরের সহযোগিতায় গঠিত হয় জাতীয় নারী হকি দল। এই দলটি গঠনে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছেন তিনি।তৃণমূল থেকে জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক পর্যায় সবখানেই আছে তার পদচিহ্ন।
২০১৯ সালে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এএইচএফ কাপ,২০২৩ সালে ওমানে অনুষ্ঠিত ফাইভ এ সাইড হকি টুর্নামেন্ট সর্বশেষ ২০২৪ সালে ওমানে অনুষ্ঠিত এএইচএফ কাপ টুর্নামেন্ট। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের নারী হকি দল বিদেশের মাটিতে যত গুলো টুর্নামেন্ট খেলেছে এর প্রতিটি দলের ই সঙ্গে ছিলেন তিনি।
২০২২ সালে ক্রীড়া পরিদপ্তরের সহকারী পরিচালক পদ থেকে অবসর নিলে ও নারী হকি তে তিনি আজও সক্রিয়।
ইতিহাস কি মনে রাখবে তার এই অবদান ? নাকি বিদেশের মাটিতে জাতীয় নারী হকি দলের কিছু উল্লেখযোগ্য অর্জন তৈরি হলেই আমরা ভুলে যাবো তাকে ?
আঁখি