
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ফসলি মাঠের মাঝখানে একটি পুরনো ঢিবি ঘিরে যুগের পর যুগ ধরে ছড়িয়ে আছে এক রহস্যময় জনশ্রুতি। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই ঢিবির নিচে লুকিয়ে আছে ১২০০ বছরের পুরনো গুপ্তধন, যা দিয়ে পুরো বাংলাদেশের আড়াই দিনের খোরাক জোগানো সম্ভব। এই ধন-ভাণ্ডারের পাহারাদার নাকি সাপ, আর এর অস্তিত্ব নিয়ে গল্প ছড়িয়েছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
পাইকর ইউনিয়নের কাহালু উপজেলার “যোগের ভবন” নামে পরিচিত এই স্থানটি দিনের বেলাতেও অন্ধকারে ডুবে থাকে। সূর্যের আলো পৌঁছায় না ঝোপঝাড়ে ঘেরা এই ঢিবির গায়ে। সেখানেই নাকি লুকিয়ে আছে সেই দুর্লভ ধনভাণ্ডার, যার আশেপাশে রয়েছে বিষধর সাপের বাস। স্থানীয়রা বলেন, বহু মানুষ এখানে গুপ্তধনের খোঁজে এসেছেন, কিন্তু কেউ ফিরে যাননি জীবিত। কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন, কেউবা মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন।
এই জায়গাকে ঘিরে জড়িয়ে আছে বেহুলা-লখিন্দরের কাহিনিও। জনশ্রুতি বলে, কাঞ্চুকূপ নামে একটি কুয়ার ভিতরে বেহুলা তার মৃত স্বামী লক্ষীন্দরকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন। আজও ওই কুয়ার অস্তিত্ব রয়েছে। আশেপাশে রয়েছে প্রাচীন শৈলীর মন্দির, সর্বমঙ্গলা, দুর্গা, কালভৈরবী ও গৌরক্ষনাথের। মন্দিরগুলোর গায়ে এখনো পোড়া মাটির অলংকরণ ও নির্মাণশৈলীর নিদর্শন দেখা যায়। জানা যায়, এই এলাকা ছিল হিন্দুনাথ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় কেন্দ্র, যেখানে আশ্রম, কূপ, মন্দির, সবই ছিল ধর্মচর্চার অংশ।
এখানে বহুবার তান্ত্রিক, কবিরাজ, ফকির, এমনকি পূজারিরাও এসেছেন তন্ত্র-মন্ত্র ও যজ্ঞের মাধ্যমে গুপ্তধন খোঁজার জন্য। কিন্তু প্রতিবারই তারা ব্যর্থ হয়েছেন। কেউ প্রাণ হারিয়েছেন, কেউ পাগল হয়ে ফিরে গেছেন, এমনটাই জানাচ্ছেন স্থানীয় প্রবীণরা। তবে তাদের মতে, সাপদের বিরক্ত না করলে তারা কাউকে ক্ষতি করে না। বরং গ্রামের মানুষ আজও সাপদের দুধ, কলা দিয়ে মানায় রাখেন।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, ৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত এই স্থানটি শুধুই কোনো কাহিনির কেন্দ্র নয়, এটি বাস্তব ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। স্থানটি ছিল আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। অথচ আজও তার নিচে লুকিয়ে রয়েছে এমন এক ধন, যা ঘিরে রহস্যের শেষ নেই।
যোগের ভবন এখন শুধুই একটি ঢিবি নয়, এটি যেন এক জীবন্ত কিংবদন্তি। প্রশ্ন থেকেই যায়, এটা কি শুধুই লোককথা? নাকি সত্যিই লুকিয়ে আছে ইতিহাসের সেই গোপন অধ্যায়, যা এখনো সাপ পাহারা দিয়ে রক্ষা করে চলেছে?
আঁখি