
ছবি: সংগৃহীত
ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা ভূখণ্ডটির নাম গাজা। একসময় যেখানকার অলিগলি মুখর ছিল মানুষের কোলাহলে, সেই জনপদ আজ পরিণত হয়েছে রক্ত, ধ্বংস আর কান্নার আর্তনাদে ছেয়ে থাকা এক যুদ্ধক্ষেত্রে। প্রতিদিন ইসরাইলি আগ্রাসনে ছিন্নভিন্ন হচ্ছে গাজার বাকি ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, মসজিদ। প্রাণ হারিয়েছেন অর্ধলাখেরও বেশি মানুষ। একের পর এক নিহত হচ্ছেন প্রথম সারির প্রতিরোধ নেতা, কমান্ডার, এমনকি বেসামরিক প্রশাসকরাও।
তবুও গাজা হার মানেনি। দখলদার ইসরাইলের গণহত্যা আর নির্বিচার ধ্বংসযজ্ঞের মাঝেও প্রতিরোধ থেমে নেই। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়েও বীরের মতো প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। শনিবার রাতে গাজার ভেতর থেকে একাধিক রকেট ছোঁড়া হয় ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলের দিকে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রকেটগুলো খোলা জায়গায় আঘাত হানে, এতে কেউ হতাহত হয়নি। তবে পুরো সীমান্তজুড়ে বেজে ওঠে বিপদ সংকেত।
এই হামলা শুধু রকেট নিক্ষেপ নয়, এটি ছিল এক মনস্তাত্ত্বিক বার্তা। প্রতিরোধ যোদ্ধারা জানিয়ে দিয়েছে—গাজা এখনো অস্তিত্বে আছে এবং প্রতিরোধ চলছে। এই হামলার মাত্র একদিন আগেই গাজায় প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অভিযানে ১০ জন ইসরাইলি সেনা হতাহত হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে ইরানি বার্তা সংস্থা ‘মেহেদী নিউজ’। তারা আরও জানায়, প্রতিরোধ যোদ্ধারা সীমিত অস্ত্র ও রসদ নিয়েও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানছেন।
ইসরাইল দাবি করেছে, তারা হামাসের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যা করেছে। কিন্তু গাজার মাটির গভীরে প্রথিত প্রতিরোধের শিকড়—প্রতিউত্তরের মাধ্যমে বারবার সেই সত্য তুলে ধরছেন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী যোদ্ধারা। তাদের জন্য এই যুদ্ধ শুধু অস্ত্রের নয়, এটি পরিচয়ের অধিকার এবং অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।
এদিকে এই যুদ্ধের সবচেয়ে আলোচিত কূটনৈতিক উদ্যোগ এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে পাঠানো যুদ্ধবিরতির এক প্রস্তাবের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দিয়েছে গাজার প্রতিরোধ যোদ্ধারা। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—যুদ্ধ থামাতে হলে গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা পুরোপুরি সরাতে হবে এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তা দিতে হবে। এর বিনিময়ে হামাস জীবিত ও মৃত কিছু ইসরাইলি জিম্মিকে হস্তান্তরে সম্মত হয়েছে।
তবে তারা এই লড়াইকে শুধুই অস্ত্রের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখে না। বরং নিজেদের আত্মরক্ষার অধিকারকে তারা দেখে একটি পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে। তাদের বার্তা স্পষ্ট—যতক্ষণ অন্যায় থামছে না, ততক্ষণ প্রতিরোধ চলবেই।
ফরিদ