ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নাৎসিদের অনুকরণ করে যেভাবে গাজাকে ক্ষুধার রাজ্য বানাচ্ছে ইসরায়েল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:১২, ৩ জুন ২০২৫; আপডেট: ২১:২৭, ৩ জুন ২০২৫

নাৎসিদের অনুকরণ করে যেভাবে গাজাকে ক্ষুধার রাজ্য বানাচ্ছে ইসরায়েল

ছবিঃ সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক ও লেখক সৌমিয়া ঘান্নুশির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েল যে মানবিক সাহায্যের নামে অবরোধ ও নির্যাতনের কৌশল নিচ্ছে, তা নাৎসি জার্মানির “হাঙ্গার প্ল্যান”-এর আধুনিক পুনরাবৃত্তি। এই পরিকল্পনার লক্ষ্য সরাসরি একটি জাতিকে ক্ষুধার মাধ্যমে ভেঙে ফেলা।

গাজার পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে মানুষ মাটি ঘেঁটে ময়লা মেশানো ময়দা খুঁজছে, শিশুদের পাতা খেতে দেওয়া হচ্ছে, বৃদ্ধরা বালি মেশানো আটা চিবিয়ে বেঁচে আছে। বহু মানুষ দিনে গড়ে মাত্র ২৪৫ ক্যালোরি পাচ্ছে—যা অপুষ্টি রোধের ন্যূনতম মাত্রার অনেক নিচে।

ইসরায়েলি সহিংসতা ও তথাকথিত ‘সহায়তা’ প্রকল্প
“সহায়তা” হিসেবে দেয়া খাবার সপ্তাহের পর সপ্তাহ আটকে রাখা হয়, আর যখন তা পৌঁছে দেয়া হয়, তা হয় অস্ত্রধারীদের পাহারায়, যেখানে মানুষকে গুলি করে মারা হয়।

একসঙ্গে সাহায্য নিতে যাওয়া মানুষের ওপর গুলি চালিয়ে রাফায় একদিনেই ৩০ জনকে হত্যা এবং ১৭০ জনকে আহত করা হয়।

গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF) নামের মার্কিন-সমর্থিত সংস্থা আসলে খাদ্য নয়, নিয়ন্ত্রণ ও অপমান বিতরণ করছে।

GHF-এর প্রথম ধাপে খাদ্য পাবে মাত্র ১২ লাখ মানুষ, বাকি লাখ লাখ মানুষ রয়ে যাবে উপেক্ষিত।

নাৎসিদের কৌশলের প্রতিফলন
১৯৪১ সালে নাৎসিরা ইচ্ছাকৃতভাবে সোভিয়েত ও ইহুদিদের অনাহারে মারার জন্য “হাঙ্গার প্ল্যান” প্রণয়ন করেছিল, যাতে ৭০ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করে।

ইসরায়েলের এই কৌশলও পরিকল্পিত এবং উদ্দেশ্যমূলক। খাদ্য ও পানির প্রবেশ বন্ধ করে, গাজাবাসীদের বাধ্য করা হচ্ছে নীরব আত্মসমর্পণে।

সম্মানহানি ও অস্তিত্ব নিধনের নীতি
গাজা এখন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুধাক্লিষ্ট অঞ্চল, যেখানে জনসংখ্যার ১০০% অনাহারের ঝুঁকিতে।

মানুষকে শুধু হত্যা নয়, তাদের আত্মিকভাবে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে—যাতে তারা টিকে থাকার আকাঙ্ক্ষাও হারিয়ে ফেলে।

শিশুদের পেট ভরে না, মায়েরা কান্না থামাতে পারে না, কেউ রেহাই পাচ্ছে না—না শিশু, না বৃদ্ধ, না মা, না পিতা।

লেখকের বার্তা
গাজার মানুষরা আজ শুধু খাবারের জন্য লড়ছে না—তারা লড়ছে অস্তিত্ব ও মর্যাদার জন্য। ইসরায়েল কেবল তাদের শরীর ধ্বংস করতে চায় না, চায় তাদের আত্মাও মুছে দিতে। আর এই মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যেও বিশ্বের অধিকাংশ দেশ নীরব।

শেষ চিত্র:
ধ্বংসস্তূপের পাশে এক মা হাঁটু গেঁড়ে বসে, মাটির ধুলো মেশানো ময়দা হাতে তুলে বলছে:
"আমার বাচ্চারা মাটির ময়দা খাবে—তবু খাবে।"

মুমু

×