
ছবি: সংগৃহীত
রক্তে শর্করার ভারসাম্যহীনতা অনেক সময় অজানাই থেকে যায়—যতক্ষণ না ক্লান্তি, ঘোলাটে চিন্তাভাবনা কিংবা অতিরিক্ত তৃষ্ণার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। তবে সুখবর হলো, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সব সময় ওষুধ কিংবা বড় ধরনের জীবনযাপন পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে না। পুষ্টিবিদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু নির্দিষ্ট খাবার নিয়মিত খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিচের খাবারগুলো নিয়মিত খাওয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবেই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়:
১. মেথি বীজ:
মেথি বীজ খাবারের পর রক্তে শর্করার হঠাৎ বৃদ্ধি কমাতে সহায়তা করে। এতে রয়েছে দ্রবণীয় ফাইবার, যা কার্বোহাইড্রেট হজম ও শোষণ ধীর করে দেয়। ফলে শরীরে শর্করার প্রবেশ ধীরে হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত মেথি সেবনে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ে এবং ফাস্টিং ব্লাড সুগার কমে। সাধারণত এটি রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খাওয়া হয়—যা আয়ুর্বেদে বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
২. জাম (কালোজাম):
জাম ফল ও এর বীজে থাকা 'জাম্বোলিন' ও 'জাম্বোসিন' নামক যৌগ শর্করায় রূপান্তরের প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, জাম ও জাম বীজের গুঁড়া গ্লুকোজ সহনশীলতা উন্নত করতে সাহায্য করে। মৌসুমে প্রতিদিন একমুঠো জাম খাওয়ার অভ্যাস রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৩. দারুচিনি (সেইলন জাত):
সেইলন দারুচিনি ইনসুলিনের মতো কাজ করে এবং গ্লুকোজ কোষে প্রবেশে সহায়তা করে। গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, প্রতিদিন মাত্র ১ গ্রাম দারুচিনি খেলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে। তবে অবশ্যই সঠিক জাত নির্বাচন ও নিয়মিততা জরুরি।
৪. ঢেঁড়স (ভেন্ডি):
লোককথা মনে হলেও, ঢেঁড়সের স্বাস্থ্য উপকারিতা এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। ঢেঁড়সে থাকা মিউসিলেজ নামক পদার্থ অন্ত্রে শর্করার শোষণ কমায়। রাতে কেটে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি খেলে খাবারের পর রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৫. বেল পাতা:
কম পরিচিত হলেও বেল পাতা বহুদিন ধরে গ্রামীণ চিকিৎসায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে থাকা 'এইজেলিন' ও 'মারমেলোসিন' নামক উপাদান ইনসুলিন নিঃসরণে সহায়তা করতে পারে। মাঝেমধ্যে সামান্য পরিমাণ বেল পাতার রস খেলে তা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করতে পারে।
৬. চিয়া বীজ:
চিয়া বীজে থাকা দ্রবণীয় ফাইবার ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পানিতে ভিজিয়ে নিলে জেল তৈরি করে, যা খাদ্য হজম ও গ্লুকোজের শোষণ ধীর করে দেয়। সকালে দই বা স্মুদি’র সাথে চিয়া বীজ মিশিয়ে খেলে এটি রক্তে শর্করার হঠাৎ উত্থান রোধ করে।
৭. সুষম খাদ্যাভ্যাস:
শুধু নির্দিষ্ট কিছু খাবার নয়, বরং প্রতিদিন সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ—যেখানে ফাইবার, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও নিম্ন গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার থাকে—তা রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসব খাবার একদিনে জাদুর মতো কাজ করবে না ঠিকই, তবে নিয়মিত ও সচেতনভাবে গ্রহণ করলে তা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও রক্তে শর্করার উপর দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে কারও যদি আগে থেকেই কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, তাহলে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ফারুক