
.
আজ ৫ জিলহজ। বরকতময় মদিনা শরীফের ৯৫টা নাম রয়েছে। (অফা-আল অফা, ১ম খন্ড, - নূরুদ্দীন সামহুদী)। দুনিয়ার আর কোনো স্থানের এত বেশি নাম নেই। যেমন- আসরেব। নূহ (আঃ)-এর বংশধরদের ছড়িয়ে পড়া এক ব্যক্তির নামানুসারে এই নামকরণ করা হয়েছে। আসরেবকে ‘ইয়াসরাব’ও (ইয়াসরিব) বলে। যাই হোক, নামটি উলামায়ে কিরামের নিকট পছন্দনীয় নয়। কুরআনে মুনাফিকদের বক্তব্য উল্লেখ প্রসঙ্গে ইয়াসরাব শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। ইয়াসরাবের এক অর্থ নষ্ট করা।
দ্বিতীয় নাম আরদুল্লাহ বা আল্লাহর জমিন। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, ‘আল্লাহর জমিন কি প্রশস্ত ছিল না যে, তোমরা সেখানে হিজরত করবে?’ মদিনা একদিকে আরদুল্লাহ বা আল্লাহর জমিন, অন্যদিকে তা আরদুল হিজরাহ বা হিজরাতের স্থান। আরেক নাম হারামু রাসূলিল্লাহ অর্থ রাসূলুল্ল্হ্রা (স.) ঘোষিত সম্মানিত স্থান। কারণ তিনি মোনাজাতে বলতেন, আল্লাহ তুমি মক্কাকে যেভাবে হারাম হিসেবে কবুল করেছ, তেমনি আমার এ মদিনাকেও হারামের অন্তর্ভুক্ত করে নাও।
জান্নাতুন নাখল- খেজুরের বাগান। এটি মদিনার আরেক নাম। এখানকার খেজুর এখনো দুনিয়া বিখ্যাত। এ শহরের এক বিশেষ নাম তাইয়েবাহ। তাইয়্যেবাহ মানে পুতঃপবিত্র। নবীজির অবস্থানের কারণে এ নামে স্মরণীয় হয়ে আছে মদিনা শরীফ। বলা হয়, মদিনা তাইয়্যেবাহ। প্রতিটি নামেরই তাৎপর্য আছে এবং মদিনার সঙ্গে এর গভীর সম্পর্ক ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যগতভাবে বিদ্যমান।
মদিনা শরীফের ৯৯টি বৈশিষ্ট্যও আছে।-(প্রাগুক্ত) সেগুলো হচ্ছে- হজরত রাসূলুল্লাহ (স.), হজরত আবু বকর (রাদি.) এবং হজরত ওমারসহ (রাদি.) মদিনায় দাফনকৃত অধিকাংশ সাহাবীকে মদিনার মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। মহান আল্লাহ জিবরিল ও মীকাইল (আ.)-কে জমিন থেকে এক মুষ্ঠি মাটি আনার জন্য পাঠালেন। জমিন অস্বীকার করায় আল্লাহ আজরাইলকে পাঠান। তিনি এক মুষ্ঠি মাটি নেন। ইবলিস সমস্ত জমিনে বিচরণ করেছে। ফলে জমিনের কোনো অংশে তার পা পড়েছে, আর কোনো অংশ দুই পায়ের মাঝে ছিল। যে সকল প্রাণ ইবলিসের পায়ের তলার মাটি থেকে সৃৃষ্টি করা হয়েছে সেগুলো দুষ্টু হয়েছে। আর শয়তানের পা যে মাটিতে লাগেনি, তা দিয়ে সকল নেককার ওলি ও নবীদের সৃষ্টি করা হয়েছে। উম্মাহর শ্রেষ্ঠ লোকদের সেখানে দাফনও করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাহাবায়ে কেরাম রয়েছেন। - (বিস্তারিত দেখুন মদিনা শরীফের ইতিকথা, এএনএম সিরাজুল ইসলাম)।
আল্লাহপাক যে শহরকে তাঁর প্রিয় রাসূল হজরত মুহম্মদ (স.)-এর বসবাসের জন্য নির্ধারণ করলেন, সেই শহরের মর্যাদা অপরিসীম। হাদিস শরীফে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, কামারের হাঁপর যেমন লোহার মরীচিকা ও খাদ দূর করে, তেমনি মদিনাও নিকৃষ্ট লোকদের বের করে দেয়।- (বুখারী ও মুসলিম)। মুনাজাতে রাসূলুল্লাহ (স.) এ দোয়াও করেছেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি মদিনাকে আমাদের কাছে প্রিয় করে দাও, যেমন করে তুমি মক্কাকে আমাদের কাছে প্রিয় করেছ, বরং মক্কা অপেক্ষা এই শহরকে অধিকতর প্রিয় করে দাও। এই শহরকে আমাদের স্বাস্থ্যের অনুকূল করে দাও এবং মদিনার সা’ ও মুদে বরকত দাও (এ দুটো হচ্ছে মদিনার দ্রব্য পরিমাপ যন্ত্র), মদিনা থেকে জ্বরকে জোহফায় (রাবেগ) স্থানান্তর করে দাও।’
হাদিস বর্ণনাকারী ইবনে যাবালাহ হজরত সাঈদ ইবন মুসায়েব (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (স.) মদিনায় আল্লাহর কাছে হাত তুলে দোয়া করেন, ‘হে আল্লাহ, যে আমার ও আমার এই শহরের অধিবাসীদের ক্ষতি করার ইচ্ছা পোষণ করে, তাকে তাড়াতাড়ি ধ্বংস করে দাও।’ রাবী বলেন, তিনি এই পরিমাণ উঁচুতে হাত ওঠালেন যে, আমরা তাঁর বগলের নিচ পর্যন্ত দেখতে পেলাম।’
বিখ্যাত নাসাঈ শরীফে ইয়াযিদ ইবন আবী মালেক হজরত আনাস (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেছেন, মিরাজের রাতের ঘটনা প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আমি গাধার চাইতে বড় ও খচ্চরের চাইতে ছোট একটি প্রাণীর ওপর (বোরাক) সওয়ার হলাম। সঙ্গে রয়েছেন জিব্রাইল (আ.)। আমরা রওনা হলাম। পথে জিব্রাইল বলেন, হে মুহম্মদ, নামাজ পড়ুন। আমি তাই করলাম। জিব্রাইল প্রশ্ন করেন, আপনি কি জানেন কোথায় কোথায় নামাজ পড়েছেন? আপনি তাইয়্যেবায় (মদিনায়) নামাজ পড়েছেন এবং এটিই আপনার হিজরতের স্থান...।
রাসূলুল্লাহ (স.) দোয়া করেছেন, ‘আল্লাহ! মদিনায় তুমি মক্কার দ্বিগুণ বরকত দাও।’ হজরত ইবনে উমর থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মদিনায় এক মাস রোজা রাখা অন্য জায়গায় এক হাজার মাস রোজা রাখার সমান।-(বুখারি)। অপর এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (স.) বর্ণনা করেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তির পক্ষে মদিনায় মৃত্যুবরণ করা সম্ভব, সে যেন তাই করে। যে ব্যক্তি মদিনায় মৃত্যুবরণ করে, আমি তার জন্য কিয়ামতের দিন সাক্ষী ও সুপারিশকারী হব।’
ইব্রাহিম ইবন আবিল জাহম থেকে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ (স.) হারেস ইবন খাজরাজের বাড়িতে গিয়ে দেখলেন যে, ওই পরিবারের সবাই অসুস্থ। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কি হয়েছে? তারা বলল, আমরা জ্বরে আক্রান্ত। তিনি বিশেষ করে জিজ্ঞেস করলেন, সুহাইবের জ্বরের চিকিৎসার ব্যাপারে তোমরা কী করলে? তারা উত্তরে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমরা কী করব? তখন তিনি বললেন, তোমরা (মদিনার) মাটি পানিতে মিশিয়ে তাতে সামান্য থুথু দিয়ে নিচের দোয়া পড়ে রোগীকে গোসল দিলে আরোগ্য লাভ করবে।
(আরবি : বিসমিল্লাহি তুরাবু আরদিনা বিরিবকী বাদিনা শিফাআল লি মারিদানা বি ইজনী রাব্বিনা) অর্থ : ‘আল্লাহর নামে, আমাদের জমিনের মাটি, আমাদের কারোর থুথু মিশ্রিত অবস্থায়, আল্লাহর হুকুমে, আমাদের রোগীদের জন্য আরোগ্য লাভের উপায়।’ সেদিন এভাবে তদবির করায় জ্বরাক্রান্ত সাহাবী সুহাইবের জ্বর সেরে গেল। (সুবহানাল্লাহ, হুজুরের (স.) কথার কত বরকত ও ফজিলত)।
প্যানেল