ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

‘মৃত’ ঘোষণার পর বেঁচে ফিরলেন বৃদ্ধ

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৪১, ৩ জুন ২০২৫

‘মৃত’ ঘোষণার পর বেঁচে ফিরলেন বৃদ্ধ

ছবি: সংগৃহীত

হরিয়ানায় এক বৃদ্ধকে ভেন্টিলেটরে চার দিন রাখার পর ‘মৃত’ ঘোষণা করা হয়। পরিবারের সদস্যরা তার দেহ নিয়ে ফিরছিলেন শেষকৃত্যের জন্য। কিন্তু পথে অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কা খাওয়ার পর যা ঘটল, তা রীতিমতো সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানায়।

অ্যাম্বুলেন্স যখন সড়কের একটি গভীর গর্তে ধাক্কা খায়, তখন যাকে 'মৃত' ঘোষণা করে পরিবার চিতা প্রস্তুত করছিল, সেই বৃদ্ধ ব্যক্তি হঠাৎ জীবিত হয়ে ওঠেন। ৮০ বছর বয়সী হৃদরোগী দার্শন সিং ব্রারকে পাঞ্জাবের পাটিয়ালার একটি হাসপাতালে চারদিন ধরে ভেন্টিলেটরে রাখার পর, চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারের লোকজন সকাল ৯টার দিকে খবর পান, এবং সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও শুভানুধ্যায়ীদের খবর দেওয়া হয়। গ্রামে তড়িঘড়ি করে শোকসভার আয়োজন করা হয়, তাঁবু খাটানো হয়, খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করা হয় এমনকি শেষকৃত্যের জন্য কাঠ পর্যন্ত প্রস্তুত করে রাখা হয়।

এরপর শুরু হয় দেহ আনার পথযাত্রা। পাটিয়ালা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল করনালের নিজ গ্রাম নিশিং-এ। কিন্তু পথে এক গভীর গর্তে ধাক্কা খাওয়ার সময় ঘটে যায় এক অলৌকিক ঘটনা। অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কা খাওয়ার পর ব্রারের নাতি হঠাৎ করে লক্ষ্য করেন, তার দাদার হাত নড়ছে। প্রথমে তিনি বিশ্বাস করতে পারেননি। কিন্তু একটু পরীক্ষা করে দেখেন, তার দাদার বুক ওঠানামা করছে। তখনই সঙ্গে সঙ্গে তারা গাড়ি থামিয়ে দ্রুত কাছের একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, বৃদ্ধের দেহে পালস ও রক্তচাপ দুটোই রয়েছে, এবং তিনি জীবিত।

পরে তাকে Karnal-এর এনপি রাওয়াল হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন তিনি। হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নেত্রপাল বলেন, “আমরা নিশ্চিত না যে উনি সম্পূর্ণ মৃত ছিলেন। তবে যখন তাকে আমাদের কাছে আনা হয়, তিনি নিঃশ্বাস নিচ্ছিলেন, রক্তচাপ ও পালস স্বাভাবিক ছিল। তিনি এখনো সংকটজনক অবস্থায় আইসিইউ-তে আছেন।”

এই ঘটনাকে পরিবার ‘ঈশ্বরের কৃপা’ এবং একেবারে ‘অলৌকিক’ বলে আখ্যা দিয়েছে। দার্শনের নাতি বলবন্ত সিং বলেন, “আমরা পুরো গ্রামকে তার মৃত্যু সংবাদ দিয়েছিলাম। শোক পালন ও দাহের সব আয়োজন হয়ে গিয়েছিল। এই মুহূর্তে তাকে জীবিত অবস্থায় দেখে আমরা সবাই চোখের পানি ধরে রাখতে পারছি না। যারা মৃত্যুতে শোক জানাতে এসেছিলেন, তারাই এখন আমাদের অভিনন্দন জানাচ্ছেন। এটা নিশ্চয়ই ঈশ্বরের ইচ্ছা, না হলে এটা সম্ভব ছিল না।”

ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় ওঠে। অনেকে এই ঘটনাকে 'জাদু', কেউ বলেন 'ঈশ্বরের ইচ্ছা'। তবে বাস্তব হল, ভারতের দুর্বল সড়কব্যবস্থার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে যে ক্ষোভ ছিল, সেই একই রাস্তার গর্ত এবার যেন ‘জীবনের ফেরিওয়ালা’ হয়ে উঠেছে। সাধারণত যে গর্তে দুর্ঘটনা হয়, জীবন ঝরে যায়, এবার সেই গর্তেই প্রাণ ফিরে পেলেন এক বৃদ্ধ। 

মুমু

×