
ছবি: সংগৃহীত।
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে বিধিনিষেধ আরোপের খেসারত দিচ্ছেন ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর সাধারণ মানুষ। ঢাকাকে চাপে ফেলতে নেওয়া নয়াদিল্লির করাকরির সিদ্ধান্তে ধস নেমেছে সেভেন সিস্টার্স অঞ্চল এবং পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে। এ নিয়ে মঙ্গলবার একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য ওয়্যার।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ থেকে প্রস্তুত পোশাকসহ বেশ কিছু পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্থলবন্দর দিয়ে এসব পণ্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এতে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বাণিজ্য।
নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে পেট্রাপোল, হিলি, মহাদীপুর, চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ি—এই পাঁচটি প্রধান স্থলবন্দরে কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। দ্য ওয়্যার-এর তথ্যমতে, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম স্থলবন্দর হিসেবে পরিচিত পেট্রাপোল দিয়ে আগে যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৬০০-৭০০ ট্রাক চলাচল করত, সেখানে এখন তা নেমে এসেছে সাপ্তাহিক ২০০ ট্রাকের নিচে।
এই পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকার হাজার হাজার ব্যবসায়ী, শ্রমিক, ট্রাক চালক, খালাসকারী ও দিনমজুরের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। এক হিসেবে দেখা গেছে, শুধু এই বাণিজ্যিক অচলাবস্থার কারণে প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার মানুষের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এছাড়া ভারতীয় বাজারে তৈরি পোশাকের সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় পণ্যের দাম বাড়ছে আকাশচুম্বি হারে। সাধারণত বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কম দামে সহজলভ্য থাকায় পশ্চিমবঙ্গের নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে সেগুলোর চাহিদা বেশি। ফলে দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বে এই শ্রেণির মানুষ।
বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার আগে বাংলাদেশি পোশাকের স্বল্পতা রাজ্যটির বাজারে সরবরাহ সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এর প্রভাব পড়বে রাজ্যের পোশাক খাত এবং বিপণিবিতানগুলোতেও।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, কর আরোপ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বিকল্প রুটে—সমুদ্রপথে ঘুরিয়ে ভারতে পাঠাতে হচ্ছে, এতে অতিরিক্ত ৮-১০ দিন সময় লাগছে। ফলে পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি বাজারে দামে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১০ মাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে প্রায় ১০-১২ হাজার কোটি টাকার তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যার বড় অংশই গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ও সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোতে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক কারণে নেওয়া বাণিজ্যিক সিদ্ধান্তগুলো শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের ঘাড়েই ভার ফেলে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বাণিজ্যে এমন অস্থিরতা দীর্ঘমেয়াদে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে।
নুসরাত