
রাতের বেলা আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে বাড়ির বৈদ্যুতিক বাতি বা রাস্তার আলোর চারপাশে পোকামাকড়ের এক বিরাট ঝাঁক উড়ে বেড়াচ্ছে। অনেক সময় এমন দৃশ্য চোখে পড়ে যেখানে পোকামাকড়ের একটি বিশাল দল বাতির দিকে আকৃষ্ট হয়ে আছড়ে পড়ে। কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন এমনটা ঘটে? রাতের আলো কি তাদের বিভ্রান্ত করে, অথবা তাদের আলোর প্রতি এত আকর্ষণ কেন?
বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, পোকামাকড় বা পতঙ্গেরা যে কোন আলোকে চাঁদ অথবা অন্য কোনও স্বর্গীয় আলো হিসেবে মনে করে। এটি তাদের দিক নির্ধারণের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। তাদের এই ধারণা, বিশেষ করে জীববিজ্ঞানীদের মতে, কৃত্রিম আলোতে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। তারা মনে করে যে বৈদ্যুতিক বাতির আলোটি আকাশ থেকে আসা চাঁদের আলোর মতোই।
এখন আসুন, এই আকর্ষণের কারণ খুঁজে দেখি। সাধারণত রাতের পোকামাকড়রা চাঁদের আলোর সাহায্যে তাদের পথ নির্ধারণ করে। তারা চাঁদের প্রতিফলিত আলোর সাথে একটি ধ্রুবক কোণ বজায় রেখে উড়ে চলে। কিন্তু, যখন তারা কোনো কৃত্রিম আলো দেখা পায়, তখন সে আলো তাদের পথভ্রষ্ট করে দেয়। বৈদ্যুতিক বাতির আলো চাঁদের আলোর থেকে অনেক বেশি তীব্র এবং নানা দিকে প্রতিফলিত হয়। ফলে, পোকামাকড় সেই আলোর দিকে নির্দিষ্ট কোন স্থির কোণ বজায় রেখে উড়তে পারেনা এবং অবশেষে তারা বিভ্রান্ত হয়ে বাতির চারপাশে ঘুরতে থাকে।
একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য করা যায় যে, পোকামাকড়েরা সাদা আলোর প্রতি অনেক বেশি আকৃষ্ট হয়। কারণ চাঁদের আলোর রঙও সাদা। এ ছাড়া, বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে অতিরিক্ত আলোকদূষণের কারণে অনেক পোকামাকড়ের সংখ্যা কমে গেছে। কৃত্রিম আলোর প্রভাবে, যেমন জোনাকি পোকাদের মধ্যে আলোক সংকেতের আদান প্রদান বাধাগ্রস্ত হয়, যার কারণে তাদের প্রজনন প্রক্রিয়া বাধিত হয়।
অর্থাৎ, কৃত্রিম আলো শুধু আমাদের জন্য নয়, পরিবেশের জন্যও এক ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজু