দাম্পত্য জীবনে ভুলভ্রান্তি থাকবেই, তবে কিছু কথা বা অভ্যাস এড়িয়ে চললেই সম্পর্ক হয়ে উঠতে পারে আরও দৃঢ় ও আনন্দময়।বিয়ের পর শুধু ভালোবাসাই নয়, একটি সফল বৈবাহিক সম্পর্কের জন্য দরকার পারস্পরিক সম্মান, সংবেদনশীলতা এবং সচেতন যোগাযোগ। বহু দম্পতির সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে মনোচিকিৎসক ও সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন সম্পর্ক ভেঙে পড়ার মূল কারণ অনেক সময় এমন কিছু কথাবার্তা ও আচরণ, যা আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ হলেও ধীরে ধীরে দুরত্ব বাড়ায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দাম্পত্য জীবনে কিছু নির্দিষ্ট বাক্য বা মন্তব্য পরোক্ষভাবে সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে। তাই সম্পর্ক মজবুত রাখতে চাইলে নীচের ৫টি কথায় ‘না’ বলাই শ্রেয়।
১. “তোমার দোষ” বা “তুমি সবসময় এমন করো”
এই ধরনের অভিযোগমূলক বাক্য সঙ্গীর আত্মসম্মান ও মনোবল ভেঙে দেয়। আমেরিকান সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. জন গটম্যান বলেন, “সমালোচনা নয়, অভিযোগ করুন” অর্থাৎ, সঙ্গীর চরিত্রকে আক্রমণ না করে নির্দিষ্ট ঘটনার প্রসঙ্গে বলুন। উদাহরণস্বরূপ, “তুমি কখনো সময়মতো বাসায় আসো না” বলার বদলে বলা যেতে পারে, “যখন তুমি দেরি করো, তখন আমি একা ও অবহেলিত বোধ করি।”
২. “তোমার কারণে আমি খুশি নই”
সুখ বা অসুখ একান্তই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। জীবনসঙ্গীর কাঁধে নিজের মানসিক চাপ তুলে দিলে সম্পর্ক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। একজন পরিণত সঙ্গীর উচিত নিজের আবেগ ও প্রয়োজন সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা করা, তবে দায় চাপানো নয়।
৩. “তুমি আগের মতো নেই”
মানুষ সময়ের সঙ্গে বদলায়, আর সেই পরিবর্তনকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করাই পরিণত সম্পর্কের পরিচায়ক। “তুমি বদলে গেছ” বলার বদলে “তোমার এই পরিবর্তন আমাকে বিস্মিত করছে, একটু বোঝাতে পারো?”—এমনভাবে কথা বললে বোঝাপড়ার সুযোগ বাড়ে।
৪. “আমার সময় নেই”
এই বাক্য সঙ্গীর প্রতি অবহেলার বার্তা দেয়। দাম্পত্য সম্পর্কে সময় না দেওয়া মানে সম্পর্কের যত্ন না নেওয়া। ব্যস্ততার মধ্যেও একে অপরের জন্য কিছু সময় বরাদ্দ রাখা সম্পর্ককে উষ্ণ রাখে। এমনকি ছোট্ট এক কাপ চা বা হাঁটার সময়ও অনেক কিছু বদলে দিতে পারে।
৫. “তুমি সবসময় ভুল করো”
এ ধরনের সাধারণীকরণ সঙ্গীর আত্মবিশ্বাসে আঘাত হানে। কোনো নির্দিষ্ট সমস্যা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা না করে বারবার দোষারোপ করলে সম্পর্ক বিষিয়ে ওঠে। বরং সমস্যার উৎস খুঁজে নিয়ে যৌথভাবে সমাধানের চেষ্টা করলে উভয়ের মধ্যকার আস্থা বাড়ে।
বিয়ের পর সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা কঠিন কিছু নয়, যদি দু’জনেই সচেতন হন কী বলা উচিত এবং কী নয়। সম্পর্কের রসায়ন যতটা আবেগের, ঠিক ততটাই কথাবার্তার সূক্ষ্মতায় নিহিত। তাই যে কথাগুলো অবচেতনে দাম্পত্যে দূরত্ব তৈরি করতে পারে, সেগুলোর জায়গায় যদি বুঝদার, সংবেদনশীল এবং সহানুভূতিশীল কথাবার্তা আসে, তাহলে সম্পর্ক হয়ে উঠবে আরও দৃঢ়, শান্তিময় ও আনন্দঘন।
সূত্র:https://tinyurl.com/y2j93jx7
আফরোজা
