ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সন্তানস্নেহে লালিত জলহস্তীর কামড়ে মৃত্যু, দক্ষিণ আফ্রিকায় চাঞ্চল্য

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:১৩, ৪ জুন ২০২৫

সন্তানস্নেহে লালিত জলহস্তীর কামড়ে মৃত্যু, দক্ষিণ আফ্রিকায় চাঞ্চল্য

ছবি: সংগৃহীত

পোষা প্রাণী নয়, হামফ্রেকে পরিবারের সদস্য বলেই ভাবতে শুরু করেছিলেন মারিয়াস। প্রায়শই তাঁর সঙ্গে নদীর তীরে ভ্রমণে যেতেন। নদীর জলে চলত জলকেলি। জলহস্তীটিকে মানুষের সঙ্গে সাঁতার কাটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। সেই সংক্রান্ত ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।

প্রাণের থেকেও বেশি ভালোবাসতেন পোষ্যকে। সন্তানস্নেহে লালনপালন করে বড় করে তুলেছিলেন তাঁকে। এমনকি নিজের ছেলে বলে পরিচয় দিতেন পরিচিতদের কাছে। সেই প্রিয় পোষ্যই সাক্ষাৎ ‘মৃত্যুর দূত’ হয়ে নেমে এসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার সেনাবাহিনীর এক মেজরের জীবনে।

একদা মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচিয়ে তোলা প্রাণীটিই যে খোদ নিজের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে তা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি ৪০ বছর বয়সী সেনাকর্তা মারিয়াস এলস। নদী থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ।

মৃতদেহ উদ্ধারের পর তাঁর দেহে কোনও বিশাল প্রাণীর কামড় ও আঘাতের চিহ্ন খুঁজে পান চিকিৎসকেরা। সেই আঘাত দেখে তাঁরা নিশ্চিত হন, পোষ্য প্রাণীটিই নির্মমভাবে হত্যা করেছে মালিককে। পোষ্য ঘাতকের নাম হামফ্রে। প্রায় দেড় টন ওজনের একটি জলহস্তী। ২০০৫ সালে বন্যার জলে ভেসে যাওয়া এই বন্যপ্রাণীটিকে উদ্ধার করে এনেছিলেন মারিয়াস। ২০১১ সালে তার হাতেই মৃত্যু হয় তাঁর।

উদ্ধার করার পর জলহস্তীটির নাম দেন হামফ্রে। তখন তার বয়স মাত্র পাঁচ মাস। খরচ করে আইনি প্রক্রিয়ায় দত্তকও নিয়েছিলেন মারিয়াস। ছয় বছর ধরে তাঁর ৪০০ একরের কৃষিখামারে বড় হচ্ছিল হামফ্রে। মালিকের সঙ্গে ধীরে ধীরে সম্পর্কও গড়ে উঠেছিল।

জলহস্তীর পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়াতেন নির্ভীক সেনা কর্মকর্তা মারিয়াস। এই ঘনিষ্ঠতা দেখে আতঙ্কিত ছিলেন তাঁর স্ত্রী ও প্রতিবেশীরা। শেষ পর্যন্ত তাঁদের সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়। মারিয়াসের মৃতদেহ নদীতে ডুবে থাকা অবস্থায় পাওয়া যায়। সেই নদী থেকেই তিনি ছয় বছর আগে বন্যার সময় জলহস্তীটিকে উদ্ধার করেছিলেন।

স্ত্রী ও আত্মীয়রা বারবার সতর্ক করলেও তেমন আমল দেননি মারিয়াস। তাঁকে বলতে শোনা যেত, “হামফ্রে আমার ছেলের মতো। ও একজন মানুষের মতোই আচরণ করে। আমাদের মধ্যে এমন একটি সম্পর্ক রয়েছে যা অনেকেই বোঝেন না।”

তাঁর বিশ্বাস ছিল, শুধু কুকুর-বিড়াল নয়, আফ্রিকার বিপজ্জনক প্রাণীর সঙ্গেও ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়। এতে আত্মতৃপ্তি পেতেন তিনি।

তাঁর স্ত্রী লুইস, পেশায় একজন ফার্মাসিস্ট। হামফ্রের আচরণ নিয়ে তাঁর সন্দেহ ছিল বরাবরই। বিশালদেহী এই প্রাণীটি এর আগেও নানা সমস্যার সৃষ্টি করেছিল।

২০১১ সালের গোড়ার দিকে হামফ্রের তাড়া খেয়ে এক ব্যক্তি ও তাঁর সাত বছরের নাতিকে দু’ঘণ্টা গাছে আশ্রয় নিতে হয়। শেষমেশ আপেলের লোভ দেখিয়ে তাকে সরিয়ে আনেন মারিয়াস।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছিলেন, হামফ্রে বছুর হত্যা করেছে, গল্ফারদের তাড়া করেছে এবং প্রাচীর ভেঙে বারবার বেরিয়ে এসেছে।

শেষমেশ একদিন মারিয়াসের ওপর হামলা চালিয়ে, কয়েক ঘণ্টা জলে ডুবিয়ে রেখে মৃত্যু ঘটায় পোষ্যটি। দেহে ছিল কামড়ের চিহ্নও।

ঠিক একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায়। লিওন ভ্যান বিলজন নামের এক ব্যক্তি মারা যান তাঁর তিনটি পোষ্য সিংহের কামড়ে। যাদের ছোটবেলা থেকে বড় করেছিলেন, তারাই তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়।

২০১৯ সালের আগস্টে ‘মহলা ভিউ লায়ন গেম লজে’ ঘটে এই ঘটনা। লায়নের খাঁচা মেরামতের সময় পিছন থেকে আক্রমণ করে এক সিংহ। এরপর একে একে বাকি সিংহগুলোও ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাধা দেওয়ার কোনও সুযোগ পাননি লিওন।

বন্যপ্রাণীদের যতই প্রশিক্ষণ দেওয়া হোক, তাদের সহজাত হিংস্রতা যে জেগে উঠতে পারে, এই দুটি ঘটনাই তার প্রমাণ। প্রাণী সংরক্ষণকর্মীরা মনে করছেন, মারিয়াস ও লিওনের মৃত্যু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে বন্যপ্রাণী কখনোই পুরোপুরি পোষ মানে না।

শহীদ

×