
ছবি: সংগৃহীত
লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় দাস কবরস্থানের সন্ধান মিলেছে ব্রাজিলের সালভাদোর শহরে। এখানে পাওয়া গেছে ১ লাখেরও বেশি মানুষের দেহাবশেষ — যাদের অধিকাংশই ছিলেন দাস।
সালভাদোর শহরের 'সান্তা কাসা ডে মিসেরিকোর্দিয়া দা বাহিয়া' নামক একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত 'পুপিলেইরা কমপ্লেক্স'–এর নিচে এই কবরস্থান আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমানে যেখানে একটি জাদুঘর, কলেজ এবং অনুষ্ঠানস্থল রয়েছে, ঠিক তার নিচেই ইতিহাস লুকিয়ে ছিল শতাব্দীর পর শতাব্দী।
প্রথমে ১ বাই ৩ মিটার জায়গা খুঁড়ে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা খনন শুরু করেন, পরে তা আরও বাড়ানো হয়। প্রায় ২.৭ মিটার গভীরতা থেকে বড় হাড় এবং দাঁত উদ্ধার করা হয়। জানা গেছে, ১৮৪৪ সালে স্বাস্থ্যগত কারণে এই কবরস্থানটি বন্ধ করে মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল।
এই ‘ক্যাম্পো দা পলভোরা’ কবরস্থানটি প্রায় ১৫০ বছর ধরে ব্যবহার করা হয়েছিল— ১৭শ শতকের শেষভাগ থেকে ১৮৪৪ সাল পর্যন্ত। এখানে শুধু দাসদের নয়, বরং সমাজের অন্যান্য নিপীড়িত গোষ্ঠী ও বিদ্রোহীদেরও কবর দেওয়া হতো। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ১৮৩৫ সালের মালি বিদ্রোহের অংশগ্রহণকারীরা।
এই ঐতিহাসিক স্থানটি শনাক্ত করেন স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ সিলভানা অলিভিয়েরি। তিনি বাহিয়ার ফেডারেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণার অংশ হিসেবে ১৮শ শতকের পুরনো মানচিত্র, সান্তা কাসার রেকর্ড এবং আগের প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা মিলিয়ে এটির অবস্থান নির্ধারণ করেন।
তার ভাষায়, “এটি একটি পবিত্র স্থান— বাহিয়ার কৃষ্ণাঙ্গ জনগণের জন্য, এবং তাদের জন্যও যারা নিজেদের শিকড় এই জনগণের মধ্যে খুঁজে পান।”
প্রত্নতত্ত্ববিদ লুইজ আন্তোনিও পাচেকো বলেন, “এই কবরস্থানটি বহুদিন মাটি দিয়ে ঢেকে দিয়ে 'অদৃশ্য' করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু এটি ছিল, এবং সে ইতিহাস একদিন বের হবেই। এটি ইতিহাসের প্রতিকার— হিস্টোরিক্যাল রিপারেশন।”
মাটি ও আবহাওয়ার কারণে হাড়গুলো অত্যন্ত ভঙ্গুর হয়ে গেছে। ফলে গবেষকরা এখনই দেহাবশেষ তোলার সিদ্ধান্ত নেননি। সেগুলোকে বিশেষ উপায়ে সংরক্ষণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ছবিও প্রকাশ করা হয়নি, যাতে মৃতদের মর্যাদা বজায় থাকে।
প্রত্নতত্ত্ববিদ লুইজ অ্যান্তোনিও পাশেকো বলেন, “এই শহরের ইতিহাস লুকানো হয়েছিল মাটির স্তরের নিচে। আজ সেই ইতিহাস আবার উঠে এসেছে—এটি কেবল আবিষ্কার নয়, বরং এক ঐতিহাসিক পুনর্বাসন।”
মুমু