
ছবি: সংগৃহীত
ডাইনোসরদের আমরা সাধারণত কল্পনা করি বিশালদেহী, অজেয় প্রাণী হিসেবে। কিন্তু নতুন এক গবেষণা প্রমাণ করেছে, এরা আধুনিক প্রাণীদের মতোই নানা রোগে আক্রান্ত হতো — এমনকি ক্যান্সারেও।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা ৭ কোটি বছর পুরনো এক ডাইনোসরের কঙ্কাল পরীক্ষা করে তাতে ক্যান্সারের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। এটি ছিল টেলমাটোসরাস ট্রানসসিলভেনিকাস (Telmatosaurus transsylvanicus) নামের এক প্রজাতির হাঁসের ঠোঁটের মতো মুখযুক্ত ডাইনোসর, যা আজকের রোমানিয়ার অঞ্চলে বাস করত।
এই ডাইনোসরের চোয়ালে অ্যামেলোব্লাস্টোমা (ameloblastoma) নামে এক ধরনের টিউমার পাওয়া গেছে, যা সাধারণত মানুষেও দেখা যায়। গবেষক বিয়ানকাস্টেলা চেরেসার বলেন, “আমরা জানতে চেয়েছিলাম, এই টিউমারটি মানব ক্যান্সারের সঙ্গে কোনো মিল রাখে কি না।”
গবেষণাটি পরিচালনা করেছে ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডন এবং অ্যাংলিয়া রাসকিন ইউনিভার্সিটি (ARU)। তারা স্ক্যানিং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপি (SEM) ব্যবহার করে টিউমারটি বিশ্লেষণ করেন এবং সেখানে রক্তকণিকার মতো কিছু গঠন দেখতে পান। এই আবিষ্কারটি প্রমাণ করে, ফসিল বা জীবাশ্মে শুধু হাড় নয়, প্রাচীন প্রোটিন বা কোষীয় উপাদানও সংরক্ষিত থাকতে পারে।
গবেষক জাস্টিন স্টেবিং বলেন, “জুরাসিক পার্কে যেমন দেখানো হয়েছে, ডাইনোসরের ডিএনএ উদ্ধার করে তাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। কারণ ডিএনএ সময়ের সাথে সাথে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু প্রোটিন অনেক স্থায়ী, তাই আমরা সেগুলো থেকে প্রাচীন রোগ নিয়ে গবেষণা করতে পারি।”
এই গবেষণার সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, এটি আধুনিক ক্যান্সার গবেষণার জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে। যদি আমরা বুঝতে পারি ডাইনোসরের মতো দীর্ঘজীবী ও বৃহৎ প্রাণীরা কীভাবে ক্যান্সারের সাথে টিকে থাকত, তবে তা মানুষের জন্য উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবনে সহায়ক হতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, ক্যান্সার কোনো নতুন রোগ নয় — এটি বহু কোটি বছর ধরে প্রাণীজগতের অংশ। তাই ক্যান্সারের ইতিহাস জানার জন্য প্রাচীন জীবাশ্ম সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্টেবিং আরও বলেন, “আমাদের উচিত জীবাশ্ম সংরক্ষণের প্রতি আরও গুরুত্ব দেওয়া, যাতে ভবিষ্যতের গবেষকেরা আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আবিষ্কার করতে পারেন।”
এই গবেষণা শুধু প্যালিওন্টোলজি বা জীবাশ্মবিদ্যার জন্য নয়, বরং চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্যও এক সম্ভাবনাময় দিগন্ত উন্মোচন করছে।
সূত্র: ডেইলি গ্যালাক্সি
এম.কে.